Wednesday, February 15, 2012

এক বিকেলে ললনার পিছে...


নিয়মিত কলেজে যাওয়া-আসা করলেই যে ভালো ছাত্র হওয়া যায় না, আমিই তার বাস্তব উদাহরণ! পড়ালেখায় ততটা ভালো না হলেও কোনো দিন কলেজে যাওয়া মিস করিনিশুক্রবার এমনকি যেকোনো সরকারি ছুটির দিনেও আমি কলেজ প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকতাম! এর মানে এই নয় যে, স্যারদের লেকচার বা বন্ধুদের কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করার জন্য কলেজে যেতামমূলত ভাব মারার জন্যই প্রতিদিন একবার হলেও কলেজ পাড়ায় উঁকি দিয়ে আসতাম! তো রোজকার মত একদিন শুক্রবারেও কলেজে গেলামগিয়ে দেখলাম কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছেআর তাই কলেজে না ঢুকতে পেরে কলেজের পাশে ফুটপাতের এক দোকান থেকে চা খেয়ে সেখান থেকেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলামসেদিনের আবহাওয়া ছিল অনেকটা মেঘলা টাইপেরআর তাই বাসার দিকে অল্প কিছু পথ পাড়ি দিতে না দিতেই দুর্যোগের ঘনঘটার সম্মুখীন হলামঅর্থাৎ মেঘ না চাইলেও তখন বৃষ্টির এসে হাজিরঅবশ্য এর জন্য আমাকে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নিকারণ আমার কলেজ ব্যাগে বই-খাতার কোনো চিহ্ন না থাকলেও সবসময়ই একটা ছাতা উপস্থিত থাকতকাজেই মেঘের আভাস পাওয়ার সাথে সাথে ছাতাটা আগেই মাথার ওপর তুলে ধরলামঅতঃপর ছাতা মাথায় কয়েক পা সামনে যেতে না যেতেই এক রোমান্টিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পেলাম! দেখলাম আমার সামনে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এক তরুনী হেঁটে যাচ্ছেমেয়েটির চেহারা সামনাসামনি না দেখলেও সে যে বিরাট সুন্দরীই হবে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেইকারণ তার গায়ের লাল রঙের ফতুয়া, মাথার দিঘল কালো কেশ, কানের দুল, হাতের বালা আর বৃষ্টি ভেজা শরীর দেখেই মেয়েটির সৌন্দর্য অনুমান করা যাচ্ছিলআবার দেখলাম হাঁটার সুবিধার্থে মেয়েটি তার পায়ের জুতা গুলো খুলে হাতে নিয়ে নিজের কোমড় দুলাতে দুলাতে হাঁটছেযা আমার চোখে শুধু সুন্দরই নয়, বহুত অপূর্ব লাগছে! এখন ঠিক করলাম, যে করেই হোক আমাকে ওই মেয়ের চেহারাটা একবার দেখতেই হবেতো কথা না বাড়িয়ে আমি দ্রুত মেয়েটির পিছে পিছে হাঁটা ধরলামকিন্তু একি! মেয়েরা যে এত জোরে হাঁটতে পারে তা আমার জানা ছিল না। (আর জানা থাকবেই বা কী করে? পূর্বে কোনো দিন এভাবে কোনো মেয়ের পিছু নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই কিনা!) এরপর আস্তে আস্তে উপলদ্ধি করতে লাগলাম, আমি এক পা এগুলেই মেয়েটি আমাকে দুই পা পেছনে ফেলে আগে চলে যাচ্ছে! এ দিকে ভেজা পায়ে দ্রুত হাঁটার কারণে আমার পা বার বার স্লিপ কাটছেযার ফলে উপায় না দেখে আমিও মেয়েটির মত নিজের জুতাগুলো পা থেকে খুলে হাতে নিয়ে নিলামএরপর জুতাগুলো বগলতলে নিয়ে আবারো মেয়ের পেছনে হাঁটা ধরলামকিন্তু হায়...! খালি পায়ে যখন দুই কদম সামনে গেলাম তখন মনে হচ্ছিল আমি বুঝি সীতার অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছি! সেদিনই প্রথম আমার পা মাটিতে পড়েছিলএখন আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ভীষণ অহংকারী টাইপের একজন মানুষ! এ কারণেই বোধহয় আজকের আগে কোনো দিন আমার পা মাটিতে পড়েনি, তাই না? আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়ছোটবেলা থেকেই আমার ভীষণ স্যান্ডেল পরার অভ্যাস ছিলআর এ কারণেই আমার পা আজীবন স্যান্ডেলের ওপরই পড়েছেএজন্যই বললাম, আমার পা আগে কখনো মাটিতে পড়েনি!
যাই হোক, পিচঢালা রাস্তায় নিজের পা পড়তেই ব্যথায় গরম হয়ে আমার পা দুটি লাল হয়ে গেছেমনে হচ্ছে এক্ষুনি বুঝি ফোসকা পড়ে যাবে পায়েউপায় না দেখে বাধ্য হয়েই বগলের তল থেকে নামিয়ে জুতাগুলো আবার পায়ে পড়ে নিলামএরপর যথারীতি হাঁটা শুরু করলাম মেয়েটির পিছু পিছুপ্রায় মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর দূর থেকে দেখলাম মেয়েটি রাস্তার পাশে ফুটপাতের এক চায়ে দোকানে ঢুকলভাবলাম বৃষ্টিতে ভিজে মেয়েটির শরীর হয়তো ড্যামেজ... মানে ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই বোধহয় সে শরীরটা একটু চাঙা করার জন্য চা খেতে দোকানে ঢুকেছেআর তাই দেরি না করে আমিও দ্রুত মেয়ের পেছন পেছন দোকানে ঢুকে গেলামকিন্তু এবারও আমি চেহারা না দেখে কেবল মেয়ের পেছন সাইডটাই দেখার সুযোগ পেলামসে আমাকে পেছন ফেলে দোকানদারের সাথে কথা বলছেআর এ দিকে আমি এক নজরে তাকিয়ে আছি মেয়ের দিকে সে দোকান থেকে কী কিনছে এটা দেখার জন্য এবং মনে মনে অপেক্ষা করছি মেয়েটি দোকানদারের কাছ থেকে ঘুরে কখন পেছন ফিরে আমার দিকে তাকাবে এর জন্যআমি অবাক হলাম তখন যখন দেখলাম মেয়েটি টাকা দিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে দুটি বেনসন সিগারেট কিনল!
সে যাই হোক, মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম যে, 'আধুনিক মেয়ে তো তাই তাদের ৯৯% ভালো শুধু ১% খারাপ আরকি'! আর তার ১% খারাপটাই হলো এই সিগারেট খাওয়ামনে হয় ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান অধিকার কায়েম করার জন্যই আজকালকের মেয়েরা সিগারেট খায়! তো আমি এসব ভাবতে ভাবতে দেখলাম মেয়েটি দোকানদারের কাছ থেকে সিগারেট কেনা শেষ করে পেছন দিকে অর্থাৎ, আমার দিকে ফিরলদীর্ঘ সময়ের প্রতিক্ষার পর অবশেষে আমি তার চেহারা মোবারক প্রদর্শনের সুযোগ পেলাম! কিন্তু একি! চেহারা দেখে যে আমি পুরাই টাশকি খেয়ে গেলাম!! যতটা শক্‌ আমি ওনার সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে খেয়েছিলাম তারচেয়ে হাই ভোল্টেজের শক্‌টা মনে হয় এখনই খেলাম
ভাবছেন মেয়েটির চেহারা বেশ ভয়ঙ্কর ছিল, তাই না? আরে না, ব্যপারটা আসলে সেরকম কিছু নয়
হয়েছে কী...
মেয়ে ভেবে আমি এতক্ষণ যার পিছু নিতে নিতে এ পর্যন্ত আসলাম সে তো আসলে কোনো মেয়েই নয়! চেহারা দেখে বুঝলাম, মেয়ের বেশে ইনি আসলে ২০-২২ বছরের একজন ফ্যাশনেবল যুবক!!!
লেখক : সুমন আহমেদ
প্রথম প্রকাশ : দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২

Tuesday, February 14, 2012

ভালবাসা এবং একটি প্রতিজ্ঞা


শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ গরুছাগলগাধাভেড়া আরো কত্ত কি হয়! তবে আমি কিন্তু এগুলোর একটিও হইনি। কারণআমি তো এখনো প্রেমেই পড়িনি! তো প্রেমে না পরার পেছনে বড়-সড় তেমন কোনো কারণ না থাকলেও ছোটখাটো ১টা কারণ অবশ্যই আছে। আর তা হলো আমি এবং আমার এক বন্ধু দুজনে মিলে একটা যৌথ প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যেজীবনে যত কিছুই করি না কেন আমরা কখনো প্রেম করব না। বন্ধুটি অবশ্য একজনের কাছ থেকে বিশাল টাইপের এক ছ্যাঁকা খেয়ে এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর আমি...?
তেমন কিছুই নাআসলে বন্ধুর মুখ থেকে ভালোবাসার বিরুদ্ধে ভারী ভারী সব ডায়লগ শুনতে শুনতে এত্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম! অবশ্য আমি কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারিনিকারণ, আমি আবার দুই কথার লোক! অর্থ্যাৎ, সকালে এক কথা বললে বিকেলে আরেক কথা বলে ছাড়ি! বিশেষ করে আমি যা বলি তা না করতেই বেশি আনন্দ পাই! তো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের প্রধান কারণই ছিল প্রেমএকদিন কোত্থেকে যেন প্রেম নামক এই বস্তুটা উড়ে এসে ধপাস করে আমার মনে বাসা বাঁধলহঠাৎ করেই আমার ক্লাশে পড়য়া এক মেয়েকে আমার ভালো লাগতে শুরু করলআর এই ভালো লাগাই যে ভালোবাসা তা আজকাল ফিডার খাওয়া শিশুরাও জানেতো যাই হোক, মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়েই আমি মেয়েটার প্রেমে একেবারে দিওয়ানা হয়ে গেলামআমি রীতিমত তার প্রেমের স্যুইমংপুলে ডুবে ডুবে জল খাওয়া আরম্ভ করে দিলাম! এখন দিন-রাত ২৪ ঘন্টা আমার মনটা সিলিংফ্যানের মত তার পেছনে ঘুরঘুর করতে লাগলআমার ধারনা মেয়েটাও আমার প্রেমের সাগরে গড়াগড়ি দিতে শুরু করেছেকারণ, তার আচার-আচরণ আর ভাষা-ব্যাকরণে আমি এমনটাই যে আভাস পাচ্ছিলাম! এমন পরিস্থিতিতে আমার জয়গায় এখানে অন্য কেউ হলে হয়তো তার ভালোবাসার মানুষের জন্য এতদিনে নতুন কোনো গান আবিষ্কার করে ফেলতেনআমিও  গান গাইতে চেয়েছিলাম কিন্তু গলার যে বেহাল দশা তাতে করে এত্ত বড় রিস্ক নেওয়ার সাহস পাইনি! যাই হোক, এতটা দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও  আমি তাকে আমার মনের কথাটা খুলে বলতে পারিনিআর যেহেতু মেয়েরা 'বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না' নীতিতে বিশ্বাসী তাই ওর কাছ থেকে আগে অফার পাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে নাতো এভাবে আর কত? ভাবলাম মুখে না হোক অন্তত  চিঠি লিখে হলেও তাকে আমার মনের কথাটা জানানো উচিতযেই ভাবা সেই কাজতবে চিঠিটা লিখতে একটু লেট হয়ে গিয়েছিলকারণ, আমি চিঠি লেখার আগেই একদিন রাতে সে আমাকে ফোন করল। (এ যেন মেঘ না চাইতেই শিলা, বৃষ্টি, বজ্রপাত আরো কত্ত কি!) সে বলল, 'সুমন তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে'আমি বললাম, 'কি কথা বলো'? সে বলল, 'মোবাইলে বলতে পারব নাসামনা-সামনি বলতে হবেতুমি কাল সকালে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে'? জবাবে আমি কি আর না বলতে পারি! বললাম পারবতারপর স্পটের নাম বলেই সে ফোন রেখে দিলোসেদিন তার কথা ভাবতে ভাবতেই আমি সারাটা রাত পার করে দিলাম



দুই.

কাল সাতটা বাজেআমি জীবনেও এত সকালে ঘুম থেকে উঠি নাই! তবে আজ উঠেছি শুধুমাত্র তার সাথে দেখা করার জন্যঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে সেজে-গুজে তার সাথে দেখা করার জন্য রওনা দিলামপথে এক ফুলওয়ালার কাছ থেকে অনেক রিকোয়েস্ট করে ৫ টাকার ১টা আধমরা গোলাপ ৩ টাকায় কিনতে সক্ষম হলাম। (আফ্‌টার অল প্রেম-ভালোবাসার বিষয় ফুল ছাড়া খুব একটা জমে না কিনা!) এরপর ফুলটা প্যান্টের পকেটে রেখে তার সমনে উপস্থিত হলামভাবলাম সে যখনই 'আই লাভ ইউ' বলবে তখনই ফুলটা বের করে তাকে দিবআর এই উদ্দেশ্যে আগেই নিজের ডান হাতটা পকেট বরাবর রেডি করে রাখলামকিন্তু আফসোস্‌! সে আমাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য এখানে ডাকেনিডেকেছে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার চাওয়ার জন্য! মোবাইলে টাকা ধার চাইলে হয়ত আমি নানান বাহানা তৈরি করে ফেলতাম, এটা ভেবেই মনে হয় সে মোবাইলে টাকা ধার না চেয়ে এভাবে সরাসরি আমাকে এমন বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করেছেউপায় না দেখে অবশেষে প্রেস্টিজ পাংচারের ভয়ে পকেট থেকে ৫০০ টাকার ১টা কড়কড়ে নোট বের করে ওর হাতে দিলামটাকা হাতে নিয়ে সে বলল, 'তুমি রাগ করনি তো'? তখন বুক ভরা হাহাকার থাকা সত্ত্বেও ঠোঁট দুটি কিঞ্চিত বাঁকা করে মুখে হাসির ভাব ফুটিয়ে বললাম, 'আরে না রাগ করব কেন'? 'আরো লাগলে তুমি আমাকে বলো' এটাও বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু যদি সত্যি চেয়ে বসে এই ভয়ে কথাটা আর মুখ থেকে বের করিনি!
সেই দিনটি ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারিভাবলাম পরেরদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসএদিন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের জন্য কত কিছুই তো করেআর আমি না হয় আজ আমার ভালেবাসার মানুষের জন্য এই ৫০০ টাকাই বিসর্জন দিলামকথাগুলো ভাবতে ভাবতে ইতিমধ্যেই সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিলোসাথে নিয়ে গেল আমার দেওয়া ৫০০ টাকা কড়কড়ে নোটটি! অন্যদিকে আমার পকেটে রয়ে গেল আধমরা সেই লাল গোলাপটিসে যতক্ষনে গেল, ততক্ষনে আমার এই আধমরা গোলাপটি পুরোই মৃত ঘোষিত হলো! ইন্নালিল্লাহে... রাজেউন!!

তিন.

জ ১৪ই ফেব্রুয়ারিঅর্থাৎ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসহঠাৎ করেই প্রিয়ার (ভালোবাসার মানুষ) সাথে আমার দেখা হয়ে গেলদেখা হতেই সে নিজ থেকে গতকালের টাকা ধার দেওয়ার জন্য আমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাল আর বলল, কেন টাকা ধার নিয়েছিলাম তা জনতে চাইলে না?  যদিও আগ্রহ নেই তবুও বললাম, কেন নিয়েছ? বলল, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে একটা ফতুয়া গিফট করার জন্যই টাকাটা ধার নিয়েছিলাম! কথাটা শোনা মাত্রই যেন মনে মনে খুশিতে লাফ দিয়ে আমি মাটি থেকে প্রায় ২ ফুট উপরে উঠে গেলাম! (আমি আবার লাফা-লাফিতে প্রচন্ড রকমের দুর্বলযদি সবল হতাম তাহলে এতদিনে অলিম্পিক গেমসে নাম লিখিয়ে বাংলাদেশের জন্য কয়েকটা সোনার মেডেল আনার ব্যবস্থা করে ফেলতাম না!) যেহেতু আমার ধরণা ছিল যে, প্রিয়ার ভালোবাসার মানুষ একমাত্র আমিইতাই এতটা খুশি হয়েছিলম আর কি! অতঃপর বললাম, তা ফতুয়া কি কেনা হয়েছে? সে বলল, অবশ্যই এবং সেটি তাকে দিয়েই তো বাসায় ফিরছিএবার আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, তাকে... মানে কাকে? জবাবে সে বলল, তোমার বন্ধু আরিফ! এই কথা শুনে আমি অবাক হবো না কি হবো এটা বুঝে ওঠার আগেই প্রিয়া বলল, আরিফ আজ বিকেলে আমাকে চাইনিজ খাওয়াবেতুমি কি আমাদের সাথে যেতে পারবে? মুখে বললাম, না কাজ আছেআর মনে মনে বললাম, শালা ভাবলাম কি আর হইলো কি? ব্যাটা নিজেই নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে বসে আছে! এখন তোদের সাথে চাইনিজে গিয়ে আমার কোনো লাভ নেইশেষে যদি দুজনে আবেগের বসে আমাকেই খাওয়ার বিল দিতে অনুরোধ করে তবে আমি চোখে সর্ষে, সূর্যমুখী ছাড়াও আরো কত্ত যে বাহারি রকমের ফুল দেখব তার কোনো ইয়াত্তা নেই! ভালোবাসা পাইনি তো কি হয়েছে ভবিষ্যতে পাবো; কিন্তু টাকা খরচ হলে তা আর পাওয়া যাবে না! সেদিন এত্ত বড় একটা শক্‌ খাওয়ার পরও আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনিতবে নিজের মাথায় অন্যের কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার হালকা আভাস যে পাইনি তা কিন্তু নয়সাথে পেয়েছিলাম হৃদয় পোঁড়ানোর কিঞ্চিত দুর্গন্ধ! এ ঘটনার পর আমি মনে মনে শুধু এতটুকুই চেয়েছি, প্রিয়া যেন আমার পাওনা টাকা সময়মত শোধ করে দেয়নয়তো আমি আম আর ছালা তো বটেই সাথে বড়া আর খোসাও হারাবো!
অতঃপর আমি আবার আমার সেই চিরচেনা প্রতিজ্ঞা করলাম যে, জীবনে যত কিছুই করি না কেন আর কখনো প্রেমের পথে পা বাড়াবো নাতবে এবারো আমি আমার এই প্রতিজ্ঞায় পুরোপুরি অটল থাকতে পারব কিনা এ ব্যপারে কোন গ্যারেন্টি নেইকারণ, চোখ যেহেতু আছে সেহেতু আবারো যেকোনো সময় যে কাউকে ভালো লাগতেই পারে! পাঠক, আপনারা কি বলেন?
লেখক : সুমন আহমেদ
প্রথম প্রকাশ : নয়াদিগন্ত, ২০১০

Monday, February 13, 2012

ফ্রি সমাচার!


ফ্রি'র যুগে ফ্রি ছাড়া
পন্য কিনতে নাই
মাছ-মাংস তরকারিতে ও
ফ্রি থাকা চাই

মাংস কিনলে হাড্ডি ফ্রি
ছাঁই পাওয়া যায় মাছে
চিপস কিনলে ট্যাটু মিলবে
বিক্রেতাদের কাছে!

সাবানের সাথে আয়না ফ্রি
পেষ্টের সঙ্গে ব্রাশ
চা-পাতায় চামচ আর
গুঁড়ো দুধে ফ্রি গ্লাস

ফ্রি'র পিছে ছুটতে ছুটতে
মানুষ হচ্ছে পাগল
লঞ্চ ডুবিতে মারা গেলে
ফ্রি পাওয়া যায় ছাগল!

দেখে নিন ২০ বছর পর কেমন হবে আপনার চেহারা!


মি আজ আপনাদের সাথে যে সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলবো তার নাম Prophecy Master। হয়তো এই সফটওয়্যারের নাম আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যদি শুনে থাকেন বা এটি নিয়ে আগে কোথাও পোস্ট হয়ে থাকে তবে আমি দুঃখিত। আমি এর আগে একবার একটি ব্লগে এটি নিয়ে পোস্ট দেখেছিলাম। কিন্তু আফসোস সেটি ছিলো ট্রায়াল ভার্সন তাই ওই পোস্ট দেখে এতটা খুশি হতে পারিনি। আর তাই বহু জায়গা ঘুরে Prophecy Master এর ফুল ভার্সন খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তাতে ও বিফল হলাম। আবশেষে আমার এক বন্ধুর কাছে পেয়ে গেলাম এর ফুল ভার্সন! Prophecy Master সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনি আপনার আজকের চেহারাকে ২০ বছর পর কেমন দেখা যাবে তা দেখে নিতে পারবেন তা ও মাত্র ২টি ক্লিক করে! তাহলে এবার দেখে নিন কীভাবে এই কাজটি করবেন –
প্রথমে Prophecy Master সফটওয়্যারটি এখান থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন।  (Download Password : pchelplinebd.com) এরপর ডেস্কটপে আসা “ProphecyMaster” শর্টকাট আইকনে ডাবল ক্লিক করে সফটওয়্যারটি ওপেন করুন। এবার Load Image এ ক্লিক করে একটি ইমেজ লোড করে Next ক্লিক করুন। ব্যাস আপনার কাজ শেষ! এবার মিলিয়ে দেখুন ২০ বছর পর কেমন হবে আপনার চেহারা!! আপনি চাইলে Save বাটনে ক্লিক করে ছবিটি সংরক্ষন করতে পারবেন।

বিঃদ্রঃ সফটওয়্যারটি ফুল ভার্সন করার প্রক্রিয়া এর সাথে দেওয়া একটি PDF ফাইলে দেখানো হয়েছে।

Thursday, February 9, 2012

জ্যান্ত ভূত!

মাদের গ্রামের গেদা চাচা একদিন কাজের খোঁজে শহরে গেলেন। ঘুরতে ঘুরতে তার সন্ধা হয়ে গেলো এক রেল স্টেশনের কাছে। দোকান থেকে সামান্য চিড়াগুড় খেয়ে তিনি থাকার সন্ধান করতে করতে আবার চলে আসলেন রেল রাস্তার পাশে। সারাদিন হেঁটে পরিশ্রম করে শরীরটা বড়ই পরিশ্রান্ত। তখন তার চোখে এসে ভর করছে রাজ্যের একরাশ ঘুম। কিন্তু কোথায় ঘুমাবেন তা চিন্তা করতে করতে তিনি দেখতে পেলেন রেল স্টেশনের সামান্য দূরে চারজন মানুষ চাদর গায়ে শুয়ে আছেন। বেশি কিছু না ভেবে গেদা চাচা ও ওই চারজনের মাঝে একটু ফাঁক পেয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লেন। একটি বিড়ি ধরিয়ে ভাবছেন বাড়ির কথা। স্ত্রী সন্তানদের কথা। তখন ছিলো প্রচুর মশা, তাই তাকে মশায় কাঁমড়াচ্ছে। তিনি হাত দিয়ে মশা তাড়াচ্ছেন আর অবাক হয়ে দেখছেন তার দুই পাশের কাউকেই মশায় কাঁমড়াচ্ছে না! আবার তাদের কারোর-ই কোন সাড়া-শব্দ ও নেই। তারা কেউই এক চুল পরিমান ও নড়াচড়া করছেন না। ইতিমধ্যেই গেদা চাচা চাঁদের আলোয় দেখতে পেলেন দুই পুলিশ অফিসার কথা বলতে বলতে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছেন। প্রায় কাছে এসেই এক পুলিশ অফিসার থমকে দাঁড়ালেন এবং তিনি বলতে লাগলেন, আরে… লাশ রেখে গেলাম চারটা আর এখন দেখি পাঁচটা! ব্যাপার কী? অপর পুলিশ অফিসার ও চমকে গিয়ে বললেন, তাইতো! পাঁচ নাম্বারটা তাহলে ভূত নাকি? এদিকে পুলিশের কথা-বার্তা শুনে গেদা চাচার অবস্থা খারাপ। তার মনে পড়লো তিনি আজ কোথায় যেন শুনেছেন রেল দূর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে। তারমানে তিনি এখন শুয়ে আছেন সেই মরা মানুষদের মাঝে! হঠাৎ তিনি চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। এদিকে পুলিশেরা তাকে ভূত মনে করে স্টেশনের দিকে ঝেড়ে দিলেন এক দৌড়! নিরাপদ আশ্রয়ের ভয়ে গেদা চাচা ও পুলিশদের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন। আর ওদিকে পুলিশেরা চাচাকে ভূত মনে করেই প্রাণের ভয়ে আরো জোরে জোরে দৌড়াতে লাগলেন!!

মফিজ যখন হটসিটে!


ই পৃথিবীতে বর্তমানে যতজন হতভাগা আছে তাদের মধ্যে মফিজ এক ও অদ্বিতীয় একজন। সবার ধারনা, মফিজের ভাগ্য লেখার আগেই নাকি উপরওয়ালার হাতের কলমের কালি শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আর তাই নাকি তিনি মফিজের কপালে কোন কিছু না লিখেই তাকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন! আবার অনেকে বলেন, ঈশ্বর তার কলমের কালির অভাব মফিজের মাথায় পর্যাপ্ত পরিমান গোবর প্রদান করার মাধ্যমে দূর করেছেন! তো এসব নানান কারণে মফিজের আজ তার নিজের ভাগ্য নিয়ে দূর্ভোগের কোন অন্ত নেই। তবে শোনা যাচ্ছে ইদানীং তার ভাগ্যের চাকা নাকি একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করেছে। তার ছেঁড়া-ফাঁটা কপালটা নাকি এখন ফেবিকলের আঠার মত অল্প অল্প করে জোড়া লাগতে দেখা যাচ্ছে। আর তাই ভাগ্যক্রমে সে দেশের নামকরা একটি কুইজ প্রতিযোগিতা ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানে চান্স পেয়ে গেল। কাজেই মফিজকে এখন আর অপদার্থ বলে ডাকার কোন চান্স নেই। মফিজের এলাকা এখন ভীষন গরম। কারণ, তার এলাকা থেকে একমাত্র মফিজকেই টিভিতে দেখার সুযোগ পাচ্ছে সমস্ত দেশের লোকজন। আর এই কথাগুলো ভাবতেই নাকি মফিজের অন্তর চরম উত্তেজনায় ভরে উঠে।
মাত্র কয়েকটা দিনের মাথায় মফিজকে টিভিতে দেখা যাবে। কে জানে হয়তো এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই মফিজ একদিন দেশের নামি দামি একজন তারকা হয়ে যাবে। তাছাড়া মফিজের চেহারা ও কিন্তু খুব একটা খারাপ না! মফিজের নিজের বর্ননায় তার চেহারায় নাকি অনেকটা নায়ক নায়ক ভাব আছে! আর এজন্যই সে একবার টিভিতে আসতে পারলেই তার কেল্লাফতে!
যাই হোক, দেখতে দেখতে একদিন সেই মাহেন্দ্রক্ষন এসে পড়লো যেদিন কিনা মফিজ বসে আছে কোটিপতির হটসিটে। ষ্টুডিও’র চারপাশ আর টিভি সেটের সামনে প্রচুর লোকজন অপেক্ষা করছে মফিজের কোটিপতি বনে যাওয়ার পর্বটি সরাসরি উপভোগ করার জন্য। মফিজ বসে আছে হটসিটে আর তার পাশের সিটে বসা এই অনুষ্ঠানের হোষ্ট। চারদিকে আছে প্রচুর ক্যামেরা প্রোগ্রামটিকে সরাসরি টিভিতে ধারন করার জন্য। এত লোক, এত ক্যামেরা আর এত এত আয়োজন দেখে মফিজের অন্তরে ভূ-কম্পনের ন্যায় মৃদু কম্পন শুরু হয়ে গেল। অজানা এক ভয়ে তার বুকটা ঘড়ির কাঁটার মত টিক টিক করে লাফিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে হঠাৎ চারপাশের লোকজনের তুমুল কড়তালির সাথে সাথে এক, দুই, তিন বলে উপস্থাপক সাহেব কোটিপতির খেলা আরম্ভের ঘোষনা দিয়ে দিলেন।
খেলা চলছে। মফিজের সামনে তার কম্পিউটার স্ক্রীনে একের পর এক ভেসে আসছে প্রশ্ন। মফিজ খুব দ্রুত সেই প্রশ্ন গুলোর ঠিক ঠিক উত্তর দিয়ে সে তার জেতা টাকার অংক বাড়িয়ে নিচ্ছে। একে একে মোট ১২টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে মফিজ জিতে নিয়েছে পুরো ৫০ লাখ টাকা। আবার এজন্য তাকে কোন লাইফ লাইনও ইউজ করতে হয়নি। ব্যাপারটি দেখে উপস্থাপক এবং ষ্টুডিও’র লোকজন মনে মনে বলতে লাগলেন যে, একমাত্র মফিজ-ই পারবে এই অনুষ্ঠান থেকে পুরো ১কোটি টাকা জিতে নিতে। সবার ধারনা সেই হবে কুইজ খেলে দেশের সর্ব প্রথম কোটিপতি। এবারে দর্শক-জনতা হা করে তাকিয়ে আছে অনুষ্ঠানের সর্বশেষ প্রশ্ন অর্থাৎ ১৩নং প্রশ্নের দিকে যার উত্তর দিতে পারলেই মফিজ জিতে নিবে ১কোটি টাকা। দেখতে দেখতেই হঠাৎ কম্পিউটারে ধুম শব্দ করে মফিজের সামনে চলে আসলো এই অনুষ্ঠানের সর্বশেষ প্রশ্নটি। প্রশ্ন হচ্ছে -
আপনার বাবার নাম কী?
আর এই প্রশ্নের অপশন গুলো হচ্ছে যথাক্রমে -
ক) আবদুল জলিল খ) আবদুল কাশেম
গ) আবদুল মজিদ ঘ) আবদুল বাতেন
প্রশ্নটি পেয়ে মফিজ খুশিতে এতটাই আত্মহারা হলো যে খুশির চোটে সে তার নিজের বাবার নাম-ই ভুলে গেলো! এখন তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিতে গেলে যদি উত্তর ভুল হয়ে যায় তবে তাকে ১কোটি টাকার বদলে নেমে যেতে হবে মাত্র ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আর তাই সে তাড়াহুড়ো করে কোন রিস্ক নিতে চাইলো না। যেহেতু তার হাতে এখনো তিন তিনটা লাইফ লাইন অক্ষত রয়ে গেছে তাই সে এগুলোর সদ্যবহার করার চিন্তা-ভাবনা করল। অতাএব, সে উপস্থাপককে তার লাইফ লাইন নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানালো। কথাটি শুনে উপস্থাপক ও জনতা কিছুটা অবাক হলেও খেলার নিয়ম অনুযায়ী তাকে লাইফ লাইন নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো। উপস্থাপক জানতে চাইলেন, বলুন আপনি এখন কোন লাইফ লাইনটি নিতে চাচ্ছেন? জবাবে মফিজ জানায় সে, ‘ফোন এ ফ্রেন্ড’ নিতে চাচ্ছে। এরপর কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে আসলো তিনটি ফোন কলারের নাম। মফিজ এখান থেকে তিনজনের মধ্যে মাঝের জন অর্থ্যাৎ ২নং কলার মিসেস কুলসুম বেগমকে বেছে নেয় ফোন করার জন্য। উপস্থাপক জানতে চাইলেন এই কুলসুম বেগম সম্পর্কে আপনার কী হয়? জবাবে মফিজ জানায়, কুলসুম বেগম সম্পর্কে তার আপন মা! কথাটি শোনামাত্র সেখানে উপস্থিত সবাইকেই উচ্চস্বরে হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা যায়! যাই হোক, ফোন করা হলো মফিজের মা মিসেস কুলসুম বেগমের কাছে। অপরপ্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই উপস্থাপক ফোনে কতক্ষন নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে নিলেন! এরপর মফিজকে দেওয়া হল ফোনে কথা বলার জন্য। আর এজন্য তার হাতে দেওয়া হলো মাত্র ৩০ সেকেন্ড। অতএব, মফিজ ফোনে হায়/হ্যালো না বলেই দ্রুত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তার মাকে। বলল,
তোমাকে ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে বলতে হবে আমার বাবার নাম কী?
তোমার অপশন গুলো হচ্ছে -
ক) আবদুল জলিল খ) আবদুল কাশেম
গ) আবদুল মজিদ ঘ) আবদুল বাতেন
মফিজের মা প্রশ্নগুলো শুনে কিছুটা থতমত হয়ে গেলেন! তিনি বুঝতে পারলেন না যে এই প্রশ্ন শুনে তাকে হাসতে না কাঁদতে হবে! যাই হোক, নিজেকে সামলে নিয়ে মফিজের মা হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, দেখ বাবা এখানের মধ্যে অপশন ‘ক’ আর ‘খ’ যে তোর বাবার নাম নয় এ ব্যাপারে কোন কনফিউশন নেই। এখন বাকী রইলো ‘গ’ এবং ‘ঘ’ অপশন দুটি। এদের মধ্যে তোর বাবা হচ্ছে… টুট… টু… টুট… নেটওয়ার্ক প্রবলেমের কারণে ফোনের লাইন কেটে গেল! আর সেই সাথে বরবাদ হয়ে গেলো মফিজের প্রথম লাইফ লাইনটি! যেহেতু অপশন ‘ক’ আর ‘খ’ ভুল উত্তর, তাই নিঃসন্দেহে সঠিক উত্তরটি লুকিয়ে আছে অপশন ‘গ’ আর ‘ঘ’ এর ভিতর। এখানে রিস্ক এড়াতে মফিজ আরেকটি লাইফ লাইন ব্যবহার করল, যার নাম হলো ফিফটি ফিফটি। এখন কম্পিউটারের র‌্যান্ডম সিলেকশনের মাধ্যমে দুটি ভুল উত্তর সরিয়ে নেওয়া হলো। ভুল উত্তর সরানোর পর দেখা গেলো বাকী থাকলো ‘খ’ আর ‘ঘ’ অপশন দুটি। ব্যপারটা মফিজের কাছে কেমন জানি ঘোলাটে মনে হলো! আর তাই সে মূহুর্তের মধ্যে কোন উত্তর না দিয়ে সরাসরি তার তৃতীয় ও শেষ লাইফ লাইনটি নিয়ে নিলো। যেহেতু এই লাইফ লাইনটির নাম হলো অডিয়েন্স পুল তাই উপস্থাপক এবার ষ্টুডিওতে উপস্থিত জনগনের কাছে ভোট চাইলেন। এজন্য সবাইকে সময় দেওয়া হলো মাত্র ১০ সেকেন্ড। সময় শুরু হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ভোট প্রক্রিয়া শেষ হলো এবং স্ক্রীনে ভেসে আসলো জনতার ফলাফল। দেখা গেলো ফলাফলে ৯৯% জনতা ভোট করেছে অপশন ‘খ’ (আবদুল জলিল) এবং মাত্র ১% জনতা ভোট করলো অপশন ‘গ’ (আবদুল মজিদ) কে। এবার উপস্থাপক মফিজের কাছে জানতে চাইলেন তার উত্তরটি। তারপর ও যদি উত্তরে কোন প্রকার কনফিউশন থাকে তবে উপস্থাপক সাহেব মফিজকে খেলা কুইট করার আহব্বান জানালেন। মফিজকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে উপস্থাপক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখন দর্শকদের সাথে যাবেন নাকি খেলা কুইট করবেন? জবাবে মফিজ জানায়, ৯৯% জনতা যখন অপশন ‘খ’ তে ভোট করেছেন তখন এই উত্তরটি আমার মতে কিছুতেই ভুল হতে পারে না।  অতএব, আমি দর্শকদের সাথেই যেতে চাই। অর্থ্যাৎ, আমি ‘খ’ অপশনটিতে আমার উত্তর লক করলাম।
খেলা শেষ। এবার সবাই শুধু চেয়ে রইলো সঠিক উত্তর জানার অপেক্ষায়। উত্তর যদি সঠিক হয় তবে মফিজ হয়ে যাবে কোটিপতি। আর যদি কোন কারণে উত্তর ভুল হয়ে যায় তাহলে মফিজ নেমে যাবে সোজা ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। অতএব, সবার মনেই এখন টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপস্থাপক তার কম্পিউটার সাহেবকে সঠিক উত্তর জানানোর অনুরোধ জানালেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই স্ক্রীনে প্রদর্শিত হলো ফলাফল। কিন্তু একি! চারপাশে হৈ-হুল্লোরের বদলে এক সেকেন্ডেই সব নীরব হয়ে গেল। কারণ, মফিজের উত্তরটি যে ভুল হয়েছে! ব্যপারটি দেখে মফিজ সহ সেখানে উপস্থিত সকলেরই মাথায় হাত উঠে গেল। সবাই নিজ নিজ চেয়ার ছেঁড়ে মাটিতে বসে পড়লেন। এমতাবস্থায় শুধু মাত্র একজনকে দেখা গেলো ষ্টুডিও’তে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে। ব্যপারটি দেখে উপস্থাপক সাহেব ষ্টুডিওতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দর্শকের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, আপনিই কি সেই একজন যিনি অপশন ‘গ’ তে ভোট করেছিলেন? জবাবে লোকটি কিছু না বলে দৌড়ে সোজা স্টেজের সামনে এলেন এবং বলতে লাগলেন -
জ্বী, আমিই সেই একজন যে কিনা অপশন ‘গ’ অর্থ্যাৎ, জনাব আবদুল মজিদকে ভোট করেছিলাম। উপস্থাপক বললেন, বাহ্‌… বেশ ইটারেস্টিং তো! এতগুলো অডিয়েন্সের ভিড়ে একমাত্র আপনার-ই কেন মনে হয়েছিলো যে ‘আবদুল মজিদ’ রাইট আনসার হতে পারে? লোকটি এবার দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেঁড়ে বলতে লাগলেন, কেন মনে হবে না? আমার নামই যে আবদুল মজিদ এবং আমিই যে এই মফিজের সেই হতভাগা বাপ! হারামজাদা ছোটবেলা থেকে আমাকে ‘বাবা’ বলে ডাকতে ডাকতে সে যে একসময় তার নিজের বাবার আসল নামই ভুলে যাবে তা কে জানতো!!

Wednesday, February 8, 2012

এইডা আমি কী করলাম!!



সোনিয়াকে ভালোবাসি অনেক দিন হয়যে দিন তাকে প্রথম দেখি সে দিন থেকেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয়, এরপরই শুরু হলো প্রেমতবে আমার এই ভালোবাসা সম্পূর্ণ একতরফালজ্জার মাত্রাতিরিক্ত ভাব আর সাহসের কিঞ্চিত অভাবের কারণে আজো সোনিয়াকে নিজের মনের কথাটা জানানো হয়নিযা-ই হোক, মনের কথা জানুক বা না জানুক সোনিয়ার সাথে যে আমার বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এতেই আমি বেশ খুশিতবে এই সম্পর্ক কিন্তু এমনি এমনি বা এক দিনে গড়ে ওঠেনিএর জন্য প্রচুর শ্রম আর ইজ্জতের কিঞ্চিত বারোটা বাজাতে হয়েছে আমাকে! ভাবছেন কিভাবে? নো প্রবলেম, আমিই বলে দিচ্ছি -
সোনিয়ারা হলো আমাদের বাসার দোতলার ভাড়াটিয়াআর আমি হলাম সেই বাসার বাড়িওয়ালার একমাত্র সন্তানতো বাড়িওয়ালার ছেলে হিসেবে আমার মাঝে অবশ্যই একটা অন্য রকম ভাব থাকার কথা, তাই না? কিন্তু আমার মাঝে এই ভাবের কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া গেল নাউল্টো সোনিয়াকে দেখার পর থেকে আমি যেন তাদের বাসার কুলি আর কাজের লোক বনে গেছি! আসলে এর পেছনেও একটা কারণ অবশ্যই ছিলআর তা হলো, সোনিয়া তার মায়ের সাথে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতসোনিয়ার বাবা থাকতেন বিদেশেএ জন্যই তাদের বাসায় একজন কাজের লোকের দরকার ছিলযেহেতু এখনকার সময়ে শহরে কাজের লোক পাওয়াটা মুশকিল তাই আমিই মাঝে মধ্যে তাদেরকে একটু-আধটু হেল্প করে দিতাম আর কি! আর এতে করে লাভটা অবশ্য আমারই হয়েছেকাজের সুযোগেই রোজ সোনিয়াকে দেখার সুযোগ পেতামতার সাথে কথা বলতামমাঝে মধ্যে পড়াশোনার ব্যাপারেও তাকে হেল্প করতামএভাবে হেল্প করতে করতে একদিন সোনিয়ার মায়ের তরফ থেকে আরো একটা বিশাল দায়িত্ব পেয়ে গেলামআর সেই দায়িত্বের কারণে কাজের লোকের পদবি থেকে সোজা বডিগার্ডের পোস্ট পেয়ে গেলাম! এখন সোনিয়ার মায়ের নির্দেশ হলো, সোনিয়াকে রোজ কলেজে দিয়ে আসতে ও নিয়ে আসতে হবে! সোনিয়ার জন্য যেকোনো কাজ করতে আমার অবশ্য ভালোই লাগতআর তাই এই কাজটিও সানন্দে করতে রাজি হয়ে গেলামরোজ সকালে সোনিয়াকে কলেজে দিয়ে আসি, আবার বিকেল হলেই ছুটে যেতাম তাকে কলেজ থেকে বাসায় ফিরিয়ে আনার জন্যআমার কাজের ওপর সোনিয়া ও তার মা খুবই সন্তুষ্ট ছিলেনকিন্তু যারা আমার এই কাজের বিরোধী ছিল তারা হলো আমার বন্ধুবান্ধবআর তাই তো সোনিয়াকে নিয়ে কলেজে যাওয়ার পথে এরা আমাকে আড়ালে-আবডালে বডিগার্ড বলে ডাকতআমি অবশ্য তাদের ডাকে কোনো সাড়া দিতাম নাআবার তাদের প্রতি কোনো প্রকার রাগও করতাম নাকারণ তারা যখন আমাকে বডিগার্ড বলে ডাক দিত তখন মনের অজান্তেই নিজেকে বলিউডের হিরো সালমান খান ভাবা শুরু করতাম! আর সোনিয়াকে তখন মনে করতাম আমার হেরোইন কারিনা কাপুর!
যা-ই হোক, এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এখন মোটামুটি সবার কাছেই ক্লিয়ার যে আমি সোনিয়াকে ভালোবাসিবিষয়টি সোনিয়ার মা-ও জানেতবে জানার পরও তিনি আমাকে সোনিয়ার বডিগার্ডের পদ থেকে বরখাস্ত করেননিতিনি হয়তো মনে মনে ধরেই নিয়েছেন যে- মেয়ের জামাই না হোক, অন্তত কাজের লোক হিসেবেও আমি খুব একটা খারাপ না! আর তাই হয়তো সোনিয়ার সাথে চলাফেরার পথে তিনি এখনো কোনো বাধা দেয়ার চেষ্টা করেননিতো মায়ের কাছ থেকে যেহেতু গ্রিন সিগন্যাল পেলাম, এখন জানা দরকার তার মেয়ে অর্থাৎ আমার সোনিয়া আমাকে নিয়ে কী ভাবে তা দেখার চেষ্টা করাআমার ধারণা, সে-ও আমাকে নিরাশ করবে নাঅর্থাৎ তার কাছ থেকেও গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যাবেমেয়েরা যেহেতু ‌‌'বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না' নীতি অনুসরণ করে চলে, তাই তার কাছ থেকে আগাম প্রেম বা সতর্কবার্তা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেইঅতএব যে-করেই হোক আমাকেই আগে নিজের কথা সোনিয়াকে জানাতে হবেকিন্তু আমার মাঝে যে আবার চরম সাহসিকতার অভাব! তাই নিজের মুখ থেকেও যে তাকে ভালোবাসার কথা জানানো সম্ভব নাএখানে অন্য কারোর মুখও তো ব্যবহার করা বেমানানকাজেই যা করার আমাকেই করতে হবেকিন্তু কী করে যে করব ভেবে পাচ্ছিলাম নাঅবশেষে পেয়ে গেলাম একটি উপায়আর তা হলো, চিঠির মাধ্যমে সোনিয়াকে নিজের মনের কথা জানানো
যেই ভাবা সেই কাজঅতঃপর দুই রাত তিন দিন না ঘুমিয়ে লিখে ফেললাম দীর্ঘ এক লাভ লেটারপরদিন কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে সোনিয়াকে পকেট থেকে বের করে চিঠিটি দিলামবললাম, তোমার যা সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্ষুনি চিঠি পড়ে আমাকে জানাতে পারোসে আমাকে নিরাশ করল নাদেয়ার সাথে সাথেই মনোযোগসহকারে চিঠিটি পড়া আরম্ভ করলপড়া শেষে সে আমাকে কিছু না বলে ননস্টপ আলিফ লায়লা সিরিয়ালের খারাপ আত্মার ডাইনিদের স্টাইলে হো হো হো হা করে হাসতে লাগলএটি দেখে আমি বেশ আতঙ্কিত হলামঘটনা কোন দিকে মোড় নিলো তার কিছুই আমি বুঝতে পারলাম নাঅবশেষে দুরু দুরু বুকে সোনিয়াকে প্রশ্ন করলাম, কী হয়েছে? জবাবে কিছু না বলে তার হাসির মাত্রাটা আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলোএরপর সে চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে বলল, এটা পড়চিঠির দিকে চোখ বোলাতেই আমার অবস্থা টাইট! দেখলাম এতে লেখা আছে- আলু দুই কেজি, পেঁয়াজ তিন কেজি, আদা হাফ কেজি... ইত্যাদি ইত্যাদি!!
ইহা দেখিয়া আমি তো প্রায় শেষ! ভুলে সোনিয়াকে লাভ লেটারের পরিবর্তে বাজারের লিস্ট দিয়ে দিয়েছিএতে আমার কোনো আফসোস বা ভয় নেইকিন্তু সকালে যে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবার হাতে মায়ের দেয়া বাজারের লিস্টটি দিয়ে এসেছিলাম তার কী হবে?
এরপর সোনিয়াকে আর কিছু না বলে দৌড় দিলাম সোজা বাসার দিকেপথে যেতে যেতে শুধু মনে মনে একটা কথাই বার বার উচ্চারণ করতে লাগলাম; আর তা হলো-
হায় হায়...
এইডা আমি কী করলাম!!

প্রথম প্রকাশ : থেরাপি, দৈনিক নয়াদিগন্ত (০৮-০২-২০১২)