Wednesday, February 8, 2012

এইডা আমি কী করলাম!!



সোনিয়াকে ভালোবাসি অনেক দিন হয়যে দিন তাকে প্রথম দেখি সে দিন থেকেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয়, এরপরই শুরু হলো প্রেমতবে আমার এই ভালোবাসা সম্পূর্ণ একতরফালজ্জার মাত্রাতিরিক্ত ভাব আর সাহসের কিঞ্চিত অভাবের কারণে আজো সোনিয়াকে নিজের মনের কথাটা জানানো হয়নিযা-ই হোক, মনের কথা জানুক বা না জানুক সোনিয়ার সাথে যে আমার বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এতেই আমি বেশ খুশিতবে এই সম্পর্ক কিন্তু এমনি এমনি বা এক দিনে গড়ে ওঠেনিএর জন্য প্রচুর শ্রম আর ইজ্জতের কিঞ্চিত বারোটা বাজাতে হয়েছে আমাকে! ভাবছেন কিভাবে? নো প্রবলেম, আমিই বলে দিচ্ছি -
সোনিয়ারা হলো আমাদের বাসার দোতলার ভাড়াটিয়াআর আমি হলাম সেই বাসার বাড়িওয়ালার একমাত্র সন্তানতো বাড়িওয়ালার ছেলে হিসেবে আমার মাঝে অবশ্যই একটা অন্য রকম ভাব থাকার কথা, তাই না? কিন্তু আমার মাঝে এই ভাবের কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া গেল নাউল্টো সোনিয়াকে দেখার পর থেকে আমি যেন তাদের বাসার কুলি আর কাজের লোক বনে গেছি! আসলে এর পেছনেও একটা কারণ অবশ্যই ছিলআর তা হলো, সোনিয়া তার মায়ের সাথে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতসোনিয়ার বাবা থাকতেন বিদেশেএ জন্যই তাদের বাসায় একজন কাজের লোকের দরকার ছিলযেহেতু এখনকার সময়ে শহরে কাজের লোক পাওয়াটা মুশকিল তাই আমিই মাঝে মধ্যে তাদেরকে একটু-আধটু হেল্প করে দিতাম আর কি! আর এতে করে লাভটা অবশ্য আমারই হয়েছেকাজের সুযোগেই রোজ সোনিয়াকে দেখার সুযোগ পেতামতার সাথে কথা বলতামমাঝে মধ্যে পড়াশোনার ব্যাপারেও তাকে হেল্প করতামএভাবে হেল্প করতে করতে একদিন সোনিয়ার মায়ের তরফ থেকে আরো একটা বিশাল দায়িত্ব পেয়ে গেলামআর সেই দায়িত্বের কারণে কাজের লোকের পদবি থেকে সোজা বডিগার্ডের পোস্ট পেয়ে গেলাম! এখন সোনিয়ার মায়ের নির্দেশ হলো, সোনিয়াকে রোজ কলেজে দিয়ে আসতে ও নিয়ে আসতে হবে! সোনিয়ার জন্য যেকোনো কাজ করতে আমার অবশ্য ভালোই লাগতআর তাই এই কাজটিও সানন্দে করতে রাজি হয়ে গেলামরোজ সকালে সোনিয়াকে কলেজে দিয়ে আসি, আবার বিকেল হলেই ছুটে যেতাম তাকে কলেজ থেকে বাসায় ফিরিয়ে আনার জন্যআমার কাজের ওপর সোনিয়া ও তার মা খুবই সন্তুষ্ট ছিলেনকিন্তু যারা আমার এই কাজের বিরোধী ছিল তারা হলো আমার বন্ধুবান্ধবআর তাই তো সোনিয়াকে নিয়ে কলেজে যাওয়ার পথে এরা আমাকে আড়ালে-আবডালে বডিগার্ড বলে ডাকতআমি অবশ্য তাদের ডাকে কোনো সাড়া দিতাম নাআবার তাদের প্রতি কোনো প্রকার রাগও করতাম নাকারণ তারা যখন আমাকে বডিগার্ড বলে ডাক দিত তখন মনের অজান্তেই নিজেকে বলিউডের হিরো সালমান খান ভাবা শুরু করতাম! আর সোনিয়াকে তখন মনে করতাম আমার হেরোইন কারিনা কাপুর!
যা-ই হোক, এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এখন মোটামুটি সবার কাছেই ক্লিয়ার যে আমি সোনিয়াকে ভালোবাসিবিষয়টি সোনিয়ার মা-ও জানেতবে জানার পরও তিনি আমাকে সোনিয়ার বডিগার্ডের পদ থেকে বরখাস্ত করেননিতিনি হয়তো মনে মনে ধরেই নিয়েছেন যে- মেয়ের জামাই না হোক, অন্তত কাজের লোক হিসেবেও আমি খুব একটা খারাপ না! আর তাই হয়তো সোনিয়ার সাথে চলাফেরার পথে তিনি এখনো কোনো বাধা দেয়ার চেষ্টা করেননিতো মায়ের কাছ থেকে যেহেতু গ্রিন সিগন্যাল পেলাম, এখন জানা দরকার তার মেয়ে অর্থাৎ আমার সোনিয়া আমাকে নিয়ে কী ভাবে তা দেখার চেষ্টা করাআমার ধারণা, সে-ও আমাকে নিরাশ করবে নাঅর্থাৎ তার কাছ থেকেও গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যাবেমেয়েরা যেহেতু ‌‌'বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না' নীতি অনুসরণ করে চলে, তাই তার কাছ থেকে আগাম প্রেম বা সতর্কবার্তা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেইঅতএব যে-করেই হোক আমাকেই আগে নিজের কথা সোনিয়াকে জানাতে হবেকিন্তু আমার মাঝে যে আবার চরম সাহসিকতার অভাব! তাই নিজের মুখ থেকেও যে তাকে ভালোবাসার কথা জানানো সম্ভব নাএখানে অন্য কারোর মুখও তো ব্যবহার করা বেমানানকাজেই যা করার আমাকেই করতে হবেকিন্তু কী করে যে করব ভেবে পাচ্ছিলাম নাঅবশেষে পেয়ে গেলাম একটি উপায়আর তা হলো, চিঠির মাধ্যমে সোনিয়াকে নিজের মনের কথা জানানো
যেই ভাবা সেই কাজঅতঃপর দুই রাত তিন দিন না ঘুমিয়ে লিখে ফেললাম দীর্ঘ এক লাভ লেটারপরদিন কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে সোনিয়াকে পকেট থেকে বের করে চিঠিটি দিলামবললাম, তোমার যা সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্ষুনি চিঠি পড়ে আমাকে জানাতে পারোসে আমাকে নিরাশ করল নাদেয়ার সাথে সাথেই মনোযোগসহকারে চিঠিটি পড়া আরম্ভ করলপড়া শেষে সে আমাকে কিছু না বলে ননস্টপ আলিফ লায়লা সিরিয়ালের খারাপ আত্মার ডাইনিদের স্টাইলে হো হো হো হা করে হাসতে লাগলএটি দেখে আমি বেশ আতঙ্কিত হলামঘটনা কোন দিকে মোড় নিলো তার কিছুই আমি বুঝতে পারলাম নাঅবশেষে দুরু দুরু বুকে সোনিয়াকে প্রশ্ন করলাম, কী হয়েছে? জবাবে কিছু না বলে তার হাসির মাত্রাটা আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলোএরপর সে চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে বলল, এটা পড়চিঠির দিকে চোখ বোলাতেই আমার অবস্থা টাইট! দেখলাম এতে লেখা আছে- আলু দুই কেজি, পেঁয়াজ তিন কেজি, আদা হাফ কেজি... ইত্যাদি ইত্যাদি!!
ইহা দেখিয়া আমি তো প্রায় শেষ! ভুলে সোনিয়াকে লাভ লেটারের পরিবর্তে বাজারের লিস্ট দিয়ে দিয়েছিএতে আমার কোনো আফসোস বা ভয় নেইকিন্তু সকালে যে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবার হাতে মায়ের দেয়া বাজারের লিস্টটি দিয়ে এসেছিলাম তার কী হবে?
এরপর সোনিয়াকে আর কিছু না বলে দৌড় দিলাম সোজা বাসার দিকেপথে যেতে যেতে শুধু মনে মনে একটা কথাই বার বার উচ্চারণ করতে লাগলাম; আর তা হলো-
হায় হায়...
এইডা আমি কী করলাম!!

প্রথম প্রকাশ : থেরাপি, দৈনিক নয়াদিগন্ত (০৮-০২-২০১২) 

No comments:

Post a Comment