Wednesday, March 11, 2015

ঘোড়ার ডিম বিক্রেতা!

পত্রিকার দোকান থেকে পত্রিকা না কিনলেও পত্রিকার সঙ্গে দেওয়া ম্যাগাজিনগুলো ঠিকই কিনতাম নিয়মিত। আর তাই পত্রিকা বিক্রি করা অনেক হকারের সঙ্গেই বেশ ভালো খাতির হয়ে গেছে। সে সুবাদে যেদিন ম্যাগাজিন বের হয় সেদিন না গিয়ে দু-তিন দিন পরে দোকানে গেলেও পত্রিকাওয়ালারা আমার জন্য ম্যাগাজিনগুলো রেখে দিতেন। একদিন এক দোকানে গিয়ে দেখলাম, আমি যার কাছ থেকে ম্যাগাজিন কিনতাম সে নেই। বদলে এক বয়স্ক লোক বসে আছেন দোকানে। আমাকে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বয়স্ক লোকটি জিজ্ঞেস করলেন কোনো পেপার লাগবে নাকি? আমি বললাম, না, পেপার লাগবে না। তবে ঘোড়ার ডিম থাকলে একটা দিতে পারেন। কথা শুনে ভদ্রলোক আকাশ থেকে পড়লেন! তিনি বললেন, আজব! ঘোড়ায় আবার ডিম পাড়ে নাকি? আর পাড়লেও কি তা পেপারের দোকানে পাওয়া যাওয়ার কথা? যাও মুদি দোকানে গিয়ে খোঁজ করো! ভদ্রলোক একটু উচ্চ স্বরেই কথাগুলো বলছিলেন। ওনার কথা শুনে আশপাশে আরো তিন-চারজন জড়ো হয়ে গেল। ওনারা হয়তো ভাবছেন, আমি পাগলের প্রলাপ বকছি! দু-একজন অলরেডি মিটি মিটি হাসা শুরু করে দিলেন। এমন সময় যে ছেলেটির কাছ থেকে রেগুলার ম্যাগাজিন কিনতাম, সে এসে হাজির। আমাকে দেখে বলল, ভাইয়া, ম্যাগাজিন নিতে এসেছেন বুঝি? কোনটা কোনটা দেব? আমি বললাম, একটা ঘোড়ার ডিম দিলেই হবে। ছেলেটি পেপারের নিচ থেকে একটা ঘোড়ার ডিম বের করে আমার হাতে দিল। এবার সেই বয়স্ক লোকটি আমার হাতের ম্যাগাজিনটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বলল, ওহ! ঘোড়ার ডিম তাইলে একটা ম্যাগাজিনের নাম! আমি বললাম, জি চাচা। এটা কালের কণ্ঠের একটা ম্যাগাজিন। ভদ্রলোক লাজুক একটা হাসি দিলেন। এরপর আমি পত্রিকার স্টল ত্যাগ করার সময় শুনতে পেলাম, বয়স্ক লোকটি তার ভাতিজাকে উদ্দেশ করে বললেন, তুই তাইলে আইজকাল ঘোড়ার ডিমও বেচস!

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ঘোড়ার ডিম, দৈনিক কালের কন্ঠ (২২ ফেব্রয়ারি ২০১৪)

No comments:

Post a Comment