Thursday, March 12, 2015

স্বাধীনতার সুখ (প্যারোডি)



বাবুই পাখিরে চ্যাটে লিখেছে চড়াই,
‘ফেসবুকে করিসনে লাইকের বড়াই,

আমি আছি মহা হ্যাপি লাইক-টাইক চেয়ে
তুই কত কষ্ট পাস লাইক নাহি পেয়ে।’

বাবুই হাসিয়া লেখে, ‘OMG তাই?
কম পাই, তবু কাউরে নাহি তো জ্বালাই।
কম হোক, তবু না চাই মিছে ভালোবাসা,
নিজ হাতে ক্রিয়েটেড মোর আইডিয়া খাসা।’

(রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ অবলম্বনে)

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: রস+আলো, প্রথম আলো
(২৪ মার্চ ২০১৪)

দিবাস্বপ্ন!


লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআলদৈনিক সমকাল
(১০ নভেম্বর ২০১৪)

ফান্টুস! (১)

লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআলদৈনিক সমকাল
(৯ মার্চ ২০১৫)

Wednesday, March 11, 2015

ইংরেজি শব্দের ভাঙচুর!


লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: রস+আলো, প্রথম আলো 
(২৯ জুলাই ২০১৩)

আয়রন ম্যান-থ্রি উইথ আমরাও ম্যান-থ্রি!

সিনেমা দেখার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ নেই। আর হলে গিয়ে ছবি দেখব এ কথা ভুলেও চিন্তা করি না। তবে কেউ যদি ফ্রি টিকিট গিফট দেয় তাহলে আগ্রহ আপনাআপনিই চলে আসে! এবার সেরকমই একটা সুযোগ দিয়েছিলেন ঠাট্টার সিনে ঠাট্টা খ্যাত লেখক মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ ভাই! তারই কল্যানে জীবনে প্রথম স্টার সিনেপে­ক্সের মতো আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার সুযোগ পেলাম। আর ছবিটাও যেই সেই কোনো লোকাল বা ন্যাশনাল নয়, একেবারে ইন্টারন্যাশনাল! নাম ‘আয়রন ম্যান-থ্রি’। যা সোজা বাংলায় হয় লোহা মানব-৩ আরকি! নাম শুনেই বোঝা যায় ছবিটা হয়তো মেইড ইন লোহা-লঙ্করের কাজ-কারবার নিয়ে! হয়েছেও তাই! অর্থ্যাৎ পুরো ছবি জুড়েই ছিল লোহা পেটানোর টুং টাং আওয়াজ। আর তাই ছবি চলাকালীন সময়ে কয়েকবার মনে হয়েছিল আমরা বুঝি সিনেমা হলে নয়, আছি পুরান ঢাকার ধোলাইখালে!
যাই হোক, অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাঙ্খিত দিনে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। সাথে ছিল বন্ধু সুমন এবং সিনে ঠাট্টার আসাদ ভাই। হলে ঢোকার আগেই ৩জনকে এক বিরাট ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিতে হলো! আর তা হলো লাইনে দাঁড়ানো। প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়ে আমি কিছুটা কনফিউশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ টিকেট হাতে এভাবে সচরাচর মানুষকে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখেছি, তাই বলে সিনেমা হলেও? আসাদ ভাই অনেকটা বোকা টাইপের মানুষ! ভুল করে সিনেমার বদলে বাসের টিকেট কেটে ফেলেছেন কিনা কে জানে! তো লাইন কিছুটা সামনে এগুতেই আমার কনফিউশন কাটল। বাস নয়, এটা আসলে হলে ঢোকারই লাইন। দেরিতে হলেও বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হলাম! এখানে অবাক করার মতো আরেকটা বিষয় ঘটল! আর তা হলো, হলে ঢোকার আগে গেটম্যান সবাইকে একটা করে চশমা গিফট করছেন! চশমা পেয়ে তো আসাদ ভাই বেজায় খুশি! তাই পাওয়ার সাথে সাথেই চশমাটা চোখে পড়ে নিলেন। এ দেখে গেটম্যান বললেন, স্যার এটা আসলে থ্রিডি চশমা। এটা পড়তে হয় মুভি দেখার সময়। নইলে এর আসল মজা পাবেন না। আসাদ ভাইও কম যান না! ভদ্রলোকের মুখের উপর বলে ফেললেন, আমাকে বোকা পাইছেন? আমি সবই জানি। তয় খালি একটু পরীক্ষা করে দেখলাম আপনারা চশমাটা আসল নাকি ডুপি­কেট দিছেন!
এরপর ভদ্রলোকের মুখের হাসি মলিন হওয়ার আগেই আমরা হলের ভেতর ঢুকলাম। টিকেটের নাম্বারের দাপটে দখল করলাম যার যার সিট। তারপর শুরু হলো সিনেমা। ছবির স্টার্টআপেই আমরা ৩জন হতাশ! কারণ হল কতৃপক্ষ থ্রিডির পয়সা রাখলেও ছবির শুরুতে জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীত বাজালেন টু'ডিতে! এ নিয়ে হায়-হুতাশ করে লাভ নেই এটা বুঝতে পেরে ছবি দেখার প্রতি মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আবারো পিছু নিল সেই হতাশা! আমি ইংরেজীতে একটু দুর্বল। তাই ধারনা করেছিলাম আমার মতো যারা দুর্বল আছেন তাদের কথা চিন্তা করে হয়তো ছবি চলাকালীন স্ক্রীনে বাংলা সাবটাইটেলের ব্যবস্থা থাকবে! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলা দূরে থাক ইংরেজী, হিন্দী বা উর্দু কোনো সাবটাইটেলেরও দেখা মিলল না এই ছবিতে! তারপরও ছবি দেখতে লাগলাম কিছু বুঝে আর বেশিরভাগটাই না বুঝে। সমস্যা হলো ছবির নায়ক কে এটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না! প্রায় আধা ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর একটা দৃশ্যে ভিলেনের কয়েক’শ মিসাইল যখন টার্গেট মিস করে মাত্র একজনকে মারতে ব্যর্থ হচ্ছিলো তখন বুঝলাম এই একজনই হচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সেই নায়ক! কারণ এমন দৃশ্য অতীতে বাংলা-হিন্দী সিনেমায় বহুবার দেখেছি। ভিলেন যতো পাওয়ারফুলই হোক না কেন, সিম্পল একজন নায়ককে সে কখনোই মারতে পারেনা!
ছবির একটা দৃশ্যে ভিলেন প্লেন থেকে কয়েকজনকে নিচে ফেল দিল। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য উড়ে এলো আয়রন ম্যান। সে আবার চলে পুরাই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। আর তাই দর্শকের দাবী বিমান থেকে পড়তে থাকা লোকজনদেরকে একজন একজন করে সিলেক্ট না করে ডাইরেক্ট Ctrl+A চেপে সব্বাইকে সিলেক্ট করবে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু দর্শকদের দাবীর প্রতি কোনো প্রকার পরোয়া না করে নায়ক কাজ করতে লাগল সম্পূর্ণ ডেসটিনি পদ্ধতিতে! ডান হাত বাম হাত বাড়াতে বাড়াতে যখন সার্কেল পূর্ণ হলো তখনই সে সবাইকে উদ্ধার করে ফেলে দিল সমুদ্রে। ভাগ্যিস উদ্ধার হওয়া সকলেই সাঁতার জানত। নয়তো প্রাণ বাঁচানোর পরিবর্তে প্রাণ নাশের দায়ে আয়রন ম্যানকে যাবজ্জীবন জেল খাটতে হতো!
দেখতে দেখতে চলে এলো ছবির বিরতি। আসাদ ভাইকে বসতে বলে আমি আর সুমন গেলাম পপকর্ণ কিনতে। যিনি আমাদেরকে ৮০০ টাকার টিকিট গিফট করেছেন তাকে অন্তত ১০ টাকার পপকর্ণ খাওয়াতে পারব না এতোটা কৃপণ আমরা নই! কিন্তু বিল দেখে পুরা মাথায় হাত! মেজাজটাই গেল গরম হয়ে! ভাগ্যিস আমি একজন সাধারন ম্যান ছিলাম। আয়রন ম্যান হলে হয়তো এতক্ষণে গরমের চোটে শরীরের লোহা-লঙ্কর সব গলে যেতো! তাই মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য সাথে ৩টা পেপসিও কিনলাম। তারপর বিল মিটিয়ে ঢুকলাম হলের ভেতর। ফুডকোর্টে আমাদের দর কষাকষির মূহুর্তটা আসাদ ভাই দূর থেকে লুকিয়ে উপভোগ করছিলেন। বেচারাকে যতোটা বোকা মনে করছিলাম সে আসলে ততোটা বোকা না! সামনে গেলে যদি বিল দিতে হয় এই ভয়ে সে এতক্ষণ আমাদের সামনে আসেনি! আমরা পপকর্ণ আর পেপসি সমান ভাগে ভাগ করতে করতেই বিরতি শেষে ছবি পূনরায় আরম্ভ হলো। মুখে খাবার আর চোখে সানগ্লাস দিয়ে আবারও ছবি উপভোগ করতে লাগলাম। পেপসিতে দুই চুমুক দিতেই দেখি ক্যান খালি! নতুন এসেছি দেখে পরিমানে কম দিয়ে আমাদেরকে ঠকালো কিনা কে জানে! আসাদ ভাইকে বললাম, হোটেলে তো রুটির সাথে ভাজি নিলে তা কয়েকবার রিনিউ করা যায়। তো এখানেও সেই সিস্টেম চালু আছে কিনা? থাকলে ক্যানগুলো নিয়ে আবারও পেপসি ভরে আনতাম! আসাদ ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আস্তে বলেন। লোকজন শুনলে হাসবে! আমি বললাম, ধুর মিয়া ফান রাইটাররা কি দুয়েকটা মজার কথাও বলতে পারে না? নিজের ভুল বুঝতে পেরে আসাদ ভাই মুখে কয়েকটা পপকর্ণ ঠুসে দিয়ে চুপ মেরে রইলেন! হঠাৎ আবিষ্কার করলাম প্যাকেটের নিচের দিকের পপকর্ণ গুলো খুব একটা ভাজা হয়নি। এ দেখে আসাদ ভাই বললেন, ছবির ভিলেনর কাছ থেকে একটু আগুন এনে এগুলো আরও কড়া করে ভাজতে পারলে মন্দ হতো না! উলে­খ্য যে, ছবির ভিলেন আবার ছিল একজন ফায়ার ম্যান! (আমাদের প্রদত্ত নাম। কারণ ভিলেনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে আগুন বের হয় কিনা!)
এ পর্যায়ে ছবিতে আর তেমন একটা মজা পেলাম না। নায়ক যতো বড় সু-পুরুষই হোক না কেন তাকে শেষ রক্ষা করেছিলেন সিনেমার নায়িকা ওরফে তার সহধর্মিনী। নায়কের কান থেকে ছোট্ট একটা যন্ত্র খুলে গেলে তার শ্রবণশক্তি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় তার ওয়াইফ উদ্ধারকারী জাহাজ হামযার মতো এসে তাকে উদ্ধার করল। এজন্য অবশ্য পরে বেচারা আয়রন ম্যানকে হলভর্তি নারীদের তালি আর পুরুষদের গালি হযম করতে হয়েছে সমানতালে! আবার কেন আয়রন ম্যানের ওয়াইফকে সুপার আয়রন ওম্যান বলা যাবে না এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে রুল জারি করে বসে আছেন! আর একারণেই হয়তো সিনেমার একেবারে শেষের দিকে আয়রন ম্যান তার বডি থেকে বিশেষ যন্ত্রগুলো অপারেশন করে তুলে ফেলেন এবং নিজেকে আয়রন ম্যানের পদ থেকে গুটিয়ে নেয়ার ইস্তফা দেন!
ছবি শেষ। আমরা হল থেকে বের হচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম গেটম্যানরা সকলের কাছ থেকে গিফট দেওয়া থ্রিডি চশমাগুলো গুণে গুণে ফেরত নিচ্ছেন। কেউ গিফট দিয়ে তা আবার ফেরত নেয় এটা এই জীবনে প্রথম দেখলাম! সবাই যখন চশমা ফেরত দিচ্ছে তখন ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকেও দিতে হলো। এ কারণে ৩জনেরই মন খারাপ। গেট থেকে বেড়িয়ে আসাদ ভাই হঠাৎ বিজয়ের হাসি দিয়ে বললেন, চশমা আনি নাই তো কি হইছে? চশমার প্যাকেটটা নিয়া আসছি! আর কান টানলেই মাথা আসে, তাই এবার শুধু প্যাকেট আসলেও নেক্সটটাইম চশমাও এসে যাবে! আসাদ ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটা ইটের নিচে চাপা পড়া ঘাসের মতো ফ্যাকাসে করে দিয়ে আমি আমার পকেট থেকে দুই দুইটা চশমার প্যাকেট বের করে দেখালাম। আর বললাম, আপনি যদি ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় চড়েন তবে আমি চড়ি প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে! অতঃএব কেউ কারো থেকে কম না! এরপর সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। তারপর বিদায় নিয়ে ছুটলাম যে যার গন্তব্যের দিকে।


লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ঠাট্টা, দৈনিক ইত্তেফাক (২১ জুলাই ২০১৩)

শীত রঙ্গ

লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআল, দৈনিক সমকাল 
(২২ ডিসেম্বর ২০১৪)

ঘোড়ার ডিম বিক্রেতা!

পত্রিকার দোকান থেকে পত্রিকা না কিনলেও পত্রিকার সঙ্গে দেওয়া ম্যাগাজিনগুলো ঠিকই কিনতাম নিয়মিত। আর তাই পত্রিকা বিক্রি করা অনেক হকারের সঙ্গেই বেশ ভালো খাতির হয়ে গেছে। সে সুবাদে যেদিন ম্যাগাজিন বের হয় সেদিন না গিয়ে দু-তিন দিন পরে দোকানে গেলেও পত্রিকাওয়ালারা আমার জন্য ম্যাগাজিনগুলো রেখে দিতেন। একদিন এক দোকানে গিয়ে দেখলাম, আমি যার কাছ থেকে ম্যাগাজিন কিনতাম সে নেই। বদলে এক বয়স্ক লোক বসে আছেন দোকানে। আমাকে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বয়স্ক লোকটি জিজ্ঞেস করলেন কোনো পেপার লাগবে নাকি? আমি বললাম, না, পেপার লাগবে না। তবে ঘোড়ার ডিম থাকলে একটা দিতে পারেন। কথা শুনে ভদ্রলোক আকাশ থেকে পড়লেন! তিনি বললেন, আজব! ঘোড়ায় আবার ডিম পাড়ে নাকি? আর পাড়লেও কি তা পেপারের দোকানে পাওয়া যাওয়ার কথা? যাও মুদি দোকানে গিয়ে খোঁজ করো! ভদ্রলোক একটু উচ্চ স্বরেই কথাগুলো বলছিলেন। ওনার কথা শুনে আশপাশে আরো তিন-চারজন জড়ো হয়ে গেল। ওনারা হয়তো ভাবছেন, আমি পাগলের প্রলাপ বকছি! দু-একজন অলরেডি মিটি মিটি হাসা শুরু করে দিলেন। এমন সময় যে ছেলেটির কাছ থেকে রেগুলার ম্যাগাজিন কিনতাম, সে এসে হাজির। আমাকে দেখে বলল, ভাইয়া, ম্যাগাজিন নিতে এসেছেন বুঝি? কোনটা কোনটা দেব? আমি বললাম, একটা ঘোড়ার ডিম দিলেই হবে। ছেলেটি পেপারের নিচ থেকে একটা ঘোড়ার ডিম বের করে আমার হাতে দিল। এবার সেই বয়স্ক লোকটি আমার হাতের ম্যাগাজিনটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বলল, ওহ! ঘোড়ার ডিম তাইলে একটা ম্যাগাজিনের নাম! আমি বললাম, জি চাচা। এটা কালের কণ্ঠের একটা ম্যাগাজিন। ভদ্রলোক লাজুক একটা হাসি দিলেন। এরপর আমি পত্রিকার স্টল ত্যাগ করার সময় শুনতে পেলাম, বয়স্ক লোকটি তার ভাতিজাকে উদ্দেশ করে বললেন, তুই তাইলে আইজকাল ঘোড়ার ডিমও বেচস!

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ঘোড়ার ডিম, দৈনিক কালের কন্ঠ (২২ ফেব্রয়ারি ২০১৪)

হরতালের গোলমালে!

থাকব না'ক বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে...

ছোটবেলায় পড়া কবিতার এই লাইন দুটি একেবারে ফেভিকলের আঠার মতো মনের মধ্যে গেঁথে আছে বন্ধু আসিফের! আর তাই সে ঘরের চেয়ে বাইরে ঘুর ঘুর করে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে। যেকোনো সভা-সমাবেশ আর রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে আসিফের থাকা চাই-ই চাই। এর মানে এই নয় যে সে একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ বা কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য। আসিফ এগুলো করে বেড়ায় দু-চার পয়সা ইনকাম আর পেট পুরে এক বেলা খাওয়ার আশায়!
আসিফের মুখে শুনেছি, এসব সভা-সমাবেশ আর মিছিল-মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেই নাকি নানা কিসিমের খানাখাদ্য আর কিছু পয়সাপাতিও পাওয়া যায়। আর এসবের লোভে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব দলের মিছিল-মিটিংয়েই যোগদান করত সে।
আসিফের ভাষ্য মতে, সে একজন সাহসী পাবলিক। আর তাই বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রথম সারিতেই তার অবস্থান। হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভের মতো বড় বড় কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বও নাকি দেয় সে। আর প্রতিটি কর্মসূচির পর পরই এগুলোতে তার সাহসিকতার অবদান তুলে ধরে বন্ধু মহলের সামনে। কোন হরতালে কয়টা গাড়ি পুড়িয়েছে, ইটের আঘাতে কয়জন পুলিশকে আহত করেছে এবং কয়টা রিকশার হাওয়া ছেড়েছে- এসব ঘটনা অবলীলায় বলে বেড়ায় বন্ধুদের সামনে। আর এ ঘটনাগুলোই নাকি তার অতি সাহসিকতার নমুনা!
যা-ই হোক, একদিন আসিফ বন্ধু মহলে হরতালের দাওয়াত দিল। মানে রাজপথে মিছিল, ভাঙচুর আর পিকেটিংয়ের নেমন্তন্ন আর কী! আসিফ জানায়, এবারের হরতাল বেশ কড়াকড়ি হবে, তাই এর জন্য অনেক লোকের দরকার। তাছাড়া মিছিলে উপস্থিত থাকলেই নাকি জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং এক বেলা খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। দারুণ সুখবর! বন্ধু মহলের সবাই যেহেতু বেকার, তাই ভেবেছিলাম এমন আকর্ষণীয় অফার পেয়ে মিছিলে যেতে সকলে এক পায়ে খাঁড়া থাকবে। কিন্তু না। পরিবারের নিষেধাজ্ঞা আর হামলা-মামলার ভয়ে কেউই আসিফের প্রস্তাবে রাজি হলো না। একমাত্র আমিই রাজি হয়ে গেলাম আসিফের সঙ্গে হরতালের মিছিলে যোগ দিতে। মিছিল করলে টাকা পাব এর জন্য নয়, আমি রাজি হয়েছি বন্ধু আসিফ এত দিন নিজের সাহসিকতার যে গল্পগুজব করে আসছে, সেগুলো কত ভাগ সত্য এটা নিজ চোখে দেখতে।
কথামতো হরতালের দিন সকালে দেখা করলাম বন্ধু আসিফের সঙ্গে। হরতালের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত একটি বিশাল ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ। আমাকে দেখে ব্যানারটি ধরে দাঁড়াতে বলল সে। আমিও তা-ই করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ-খানেক লোক জড়ো হয়ে গেল মিছিলে যোগ দিতে। আমি আর আসিফ ছিলাম একেবারে প্রথম সারির মাঝামাঝি। ইতিমধ্যেই এলাকার কিছু বড়ভাই ওরফে দলীয় নেতা-কর্মী এসে যোগদান করলেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের নির্দেশ দেওয়া হলো, এলাকা থেকে মিছিলটি বের করে শহরের বিভিন্ন অলিগলি আর সড়ক প্রদক্ষিণ করে আমরা যেন আবার নিজ এলাকায়ই সমবেত হই।
বড়ভাইদের নির্দেশে মিছিল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম আমরা। মিছিলটি এলাকার গলি ছেড়ে মূল সড়কের কাছে যেতেই হঠাৎ শোনা গেল বিকট শব্দ। আর এই শব্দ শুনে কান দুটি একেবারে গরম হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল আমাদের চারপাশ। বুঝতে বাকি নেই যে আশপাশে কোথাও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। আর তাই মিছিলে উপস্থিত সবাই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগল। দেখলাম, আসিফও প্রাণের ভয়ে আমাকে রেখেই দিল ভোঁ-দৌড়। কিন্তু বেচারা খুব একটা অগ্রসর হতে পারেনি। দুই কদম সামনে যেতেই হোঁচট খেয়ে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। আমি গিয়ে তাকে টেনে তুললাম। মাটি থেকে উঠে আসিফ আমাকে বলল, দোস্ত... শিগগির পালা। আমাদের মিছিলে বোমা হামলা হয়েছে। বাঁচতে চাইলে এখনই পালাতে হবে। এই বলে সে আবারও দৌড় দিতে চাইল। কিন্তু পারল না। আমি তাকে থামালাম। অবাক হলো আসিফ। বলল, তোর কি জীবনের মায়া নেই? বললাম, আছে। ও এবার রেগেমেগে চেঁচিয়ে উঠল, তাহলে পালাচ্ছিস না কেন? আমি ওপরের দিকে হাত উঠিয়ে তাকে আসল ব্যাপারটা দেখালাম আর বললাম- তোরা যেটাকে বোমা বিস্ফোরণ মনে করেছিস এটা আসলে বোমা না! এটা ছিল বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ!
শুনে বেশ অবাক হলো আসিফ। সাথে একটু লজ্জাও পেল মনে হয! এরপর সে ওপরে তাকিয়ে বলল, আরে তা-ই তো! দেখ দেখ... এখনো থেমে থেমে আগুনের ফুলকি আর ধোঁয়া বের হচ্ছে ট্রান্সফরমার থেকে!

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ঘোড়ার ডিম, দৈনিক কালের কন্ঠ (২৩ ডিসেম্বর ২০১২)

মোবাইল দিয়ে ইউটিউবের ভিডিও ডাউনলোড করার সবচাইতে সহজ ট্রিকস!

ট্রিকসটা অনেক পুরনো। তারপরও দেখি অনেকে ইনবক্সে বা বিভিন্ন ভাবে জানতে চায় ইউটিউবের ভিডিও কিভাবে ডাউনলোড করা যায়? সবাইকে একই উত্তর দিতে দিতে মুখ আর হাত ব্যথা হওয়ার উপক্রম! তাই ভাবলাম এবার ট্রিকসটা লিখে রাখা যাক! তো আর বকবক না করে মূল পোস্টে গেলাম...

মোবাইল থেকে ইউটিউবের ভিডিও ডাউনলোড করতে হলে প্রথমে যেই ভিডিওটি ডাউনলোড করতে চান তার লিংকটি কপি করুন। আগে থেকে কোনো ভিডিও'র লিংক কপি করা না থাকলে ইউটিউভে প্রবেশ করে এক্ষুণি সার্চ করে যেকোনো একটি ভিডিও'র লিংক কপি করে নিন। আপনার কপি করা লিংকটি হবে এরকম- www.youtube.com/watch?v=eCiqNP2EnCU অথবা m.youtube.com/watch?v=eCiqNP2EnCU এমন। এখানে পিসি থেকে লিংক কপি করলে লিংকের শুরুটা হবে www.youtube... আর মোবাইল থেকে কপি করলে হবে m.youtube... দিয়ে। তো লিংক কপি করার পর আপনাকে এটা একটু এডিট করতে হবে। এখানে আপনাকে www বা m এর পরে যে youtube কথটা লেখা আছে সেটা এডিট করে "y" এর আগে দুইটা "ss" বসাতে হবে। অর্থাৎ এডিট করার পর আপনার লিংকটি হয়ে যাবে www.ssyoutube.com/watch?v=eCiqNP2EnCU এরকম।
এবার এই লিংকটি আপনার মোবাইলে থাকা যেকোনো ব্রাউজারের এড্রেসবারে কপি করে Enter বা Ok চাপুন। দেখবেন নতুন একটা পেইজ ওপেন হয়েছে এবং এই পেইজের নিচের আপনার সার্চ করা ভিডিও'র প্রিভিউ ও কয়েকটি ফরম্যাট দেখা যাচ্ছে। এই ফরম্যাট গুলোর যেকোনো একটাতে ক্লিক করলেই আপনার ভিডিওটি ডাউনলোড শুরু হয়ে যাবে।
নোট: সবচেয়ে ভালো হয় ডাউনলোডের জন্য আপনার মোবাইলের UC Browser ব্যাবহার করলে। কারণ এতে আপনি Cloud এবং Resume এই দুই ধরনের ডাউনলোডের এক্সট্রা সুবিধা পাবেন!