সিনেমা দেখার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ নেই। আর হলে গিয়ে ছবি দেখব এ কথা ভুলেও চিন্তা করি না। তবে কেউ যদি ফ্রি টিকিট গিফট দেয় তাহলে আগ্রহ আপনাআপনিই চলে আসে! এবার সেরকমই একটা সুযোগ দিয়েছিলেন ঠাট্টার সিনে ঠাট্টা খ্যাত লেখক মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ ভাই! তারই কল্যানে জীবনে প্রথম স্টার সিনেপেক্সের মতো আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার সুযোগ পেলাম। আর ছবিটাও যেই সেই কোনো লোকাল বা ন্যাশনাল নয়, একেবারে ইন্টারন্যাশনাল! নাম ‘আয়রন ম্যান-থ্রি’। যা সোজা বাংলায় হয় লোহা মানব-৩ আরকি! নাম শুনেই বোঝা যায় ছবিটা হয়তো মেইড ইন লোহা-লঙ্করের কাজ-কারবার নিয়ে! হয়েছেও তাই! অর্থ্যাৎ পুরো ছবি জুড়েই ছিল লোহা পেটানোর টুং টাং আওয়াজ। আর তাই ছবি চলাকালীন সময়ে কয়েকবার মনে হয়েছিল আমরা বুঝি সিনেমা হলে নয়, আছি পুরান ঢাকার ধোলাইখালে!
যাই হোক, অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাঙ্খিত দিনে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। সাথে ছিল বন্ধু সুমন এবং সিনে ঠাট্টার আসাদ ভাই। হলে ঢোকার আগেই ৩জনকে এক বিরাট ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিতে হলো! আর তা হলো লাইনে দাঁড়ানো। প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়ে আমি কিছুটা কনফিউশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ টিকেট হাতে এভাবে সচরাচর মানুষকে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখেছি, তাই বলে সিনেমা হলেও? আসাদ ভাই অনেকটা বোকা টাইপের মানুষ! ভুল করে সিনেমার বদলে বাসের টিকেট কেটে ফেলেছেন কিনা কে জানে! তো লাইন কিছুটা সামনে এগুতেই আমার কনফিউশন কাটল। বাস নয়, এটা আসলে হলে ঢোকারই লাইন। দেরিতে হলেও বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হলাম! এখানে অবাক করার মতো আরেকটা বিষয় ঘটল! আর তা হলো, হলে ঢোকার আগে গেটম্যান সবাইকে একটা করে চশমা গিফট করছেন! চশমা পেয়ে তো আসাদ ভাই বেজায় খুশি! তাই পাওয়ার সাথে সাথেই চশমাটা চোখে পড়ে নিলেন। এ দেখে গেটম্যান বললেন, স্যার এটা আসলে থ্রিডি চশমা। এটা পড়তে হয় মুভি দেখার সময়। নইলে এর আসল মজা পাবেন না। আসাদ ভাইও কম যান না! ভদ্রলোকের মুখের উপর বলে ফেললেন, আমাকে বোকা পাইছেন? আমি সবই জানি। তয় খালি একটু পরীক্ষা করে দেখলাম আপনারা চশমাটা আসল নাকি ডুপিকেট দিছেন!
এরপর ভদ্রলোকের মুখের হাসি মলিন হওয়ার আগেই আমরা হলের ভেতর ঢুকলাম। টিকেটের নাম্বারের দাপটে দখল করলাম যার যার সিট। তারপর শুরু হলো সিনেমা। ছবির স্টার্টআপেই আমরা ৩জন হতাশ! কারণ হল কতৃপক্ষ থ্রিডির পয়সা রাখলেও ছবির শুরুতে জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীত বাজালেন টু'ডিতে! এ নিয়ে হায়-হুতাশ করে লাভ নেই এটা বুঝতে পেরে ছবি দেখার প্রতি মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আবারো পিছু নিল সেই হতাশা! আমি ইংরেজীতে একটু দুর্বল। তাই ধারনা করেছিলাম আমার মতো যারা দুর্বল আছেন তাদের কথা চিন্তা করে হয়তো ছবি চলাকালীন স্ক্রীনে বাংলা সাবটাইটেলের ব্যবস্থা থাকবে! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলা দূরে থাক ইংরেজী, হিন্দী বা উর্দু কোনো সাবটাইটেলেরও দেখা মিলল না এই ছবিতে! তারপরও ছবি দেখতে লাগলাম কিছু বুঝে আর বেশিরভাগটাই না বুঝে। সমস্যা হলো ছবির নায়ক কে এটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না! প্রায় আধা ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর একটা দৃশ্যে ভিলেনের কয়েক’শ মিসাইল যখন টার্গেট মিস করে মাত্র একজনকে মারতে ব্যর্থ হচ্ছিলো তখন বুঝলাম এই একজনই হচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সেই নায়ক! কারণ এমন দৃশ্য অতীতে বাংলা-হিন্দী সিনেমায় বহুবার দেখেছি। ভিলেন যতো পাওয়ারফুলই হোক না কেন, সিম্পল একজন নায়ককে সে কখনোই মারতে পারেনা!
ছবির একটা দৃশ্যে ভিলেন প্লেন থেকে কয়েকজনকে নিচে ফেল দিল। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য উড়ে এলো আয়রন ম্যান। সে আবার চলে পুরাই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। আর তাই দর্শকের দাবী বিমান থেকে পড়তে থাকা লোকজনদেরকে একজন একজন করে সিলেক্ট না করে ডাইরেক্ট Ctrl+A চেপে সব্বাইকে সিলেক্ট করবে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু দর্শকদের দাবীর প্রতি কোনো প্রকার পরোয়া না করে নায়ক কাজ করতে লাগল সম্পূর্ণ ডেসটিনি পদ্ধতিতে! ডান হাত বাম হাত বাড়াতে বাড়াতে যখন সার্কেল পূর্ণ হলো তখনই সে সবাইকে উদ্ধার করে ফেলে দিল সমুদ্রে। ভাগ্যিস উদ্ধার হওয়া সকলেই সাঁতার জানত। নয়তো প্রাণ বাঁচানোর পরিবর্তে প্রাণ নাশের দায়ে আয়রন ম্যানকে যাবজ্জীবন জেল খাটতে হতো!
দেখতে দেখতে চলে এলো ছবির বিরতি। আসাদ ভাইকে বসতে বলে আমি আর সুমন গেলাম পপকর্ণ কিনতে। যিনি আমাদেরকে ৮০০ টাকার টিকিট গিফট করেছেন তাকে অন্তত ১০ টাকার পপকর্ণ খাওয়াতে পারব না এতোটা কৃপণ আমরা নই! কিন্তু বিল দেখে পুরা মাথায় হাত! মেজাজটাই গেল গরম হয়ে! ভাগ্যিস আমি একজন সাধারন ম্যান ছিলাম। আয়রন ম্যান হলে হয়তো এতক্ষণে গরমের চোটে শরীরের লোহা-লঙ্কর সব গলে যেতো! তাই মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য সাথে ৩টা পেপসিও কিনলাম। তারপর বিল মিটিয়ে ঢুকলাম হলের ভেতর। ফুডকোর্টে আমাদের দর কষাকষির মূহুর্তটা আসাদ ভাই দূর থেকে লুকিয়ে উপভোগ করছিলেন। বেচারাকে যতোটা বোকা মনে করছিলাম সে আসলে ততোটা বোকা না! সামনে গেলে যদি বিল দিতে হয় এই ভয়ে সে এতক্ষণ আমাদের সামনে আসেনি! আমরা পপকর্ণ আর পেপসি সমান ভাগে ভাগ করতে করতেই বিরতি শেষে ছবি পূনরায় আরম্ভ হলো। মুখে খাবার আর চোখে সানগ্লাস দিয়ে আবারও ছবি উপভোগ করতে লাগলাম। পেপসিতে দুই চুমুক দিতেই দেখি ক্যান খালি! নতুন এসেছি দেখে পরিমানে কম দিয়ে আমাদেরকে ঠকালো কিনা কে জানে! আসাদ ভাইকে বললাম, হোটেলে তো রুটির সাথে ভাজি নিলে তা কয়েকবার রিনিউ করা যায়। তো এখানেও সেই সিস্টেম চালু আছে কিনা? থাকলে ক্যানগুলো নিয়ে আবারও পেপসি ভরে আনতাম! আসাদ ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আস্তে বলেন। লোকজন শুনলে হাসবে! আমি বললাম, ধুর মিয়া ফান রাইটাররা কি দুয়েকটা মজার কথাও বলতে পারে না? নিজের ভুল বুঝতে পেরে আসাদ ভাই মুখে কয়েকটা পপকর্ণ ঠুসে দিয়ে চুপ মেরে রইলেন! হঠাৎ আবিষ্কার করলাম প্যাকেটের নিচের দিকের পপকর্ণ গুলো খুব একটা ভাজা হয়নি। এ দেখে আসাদ ভাই বললেন, ছবির ভিলেনর কাছ থেকে একটু আগুন এনে এগুলো আরও কড়া করে ভাজতে পারলে মন্দ হতো না! উলেখ্য যে, ছবির ভিলেন আবার ছিল একজন ফায়ার ম্যান! (আমাদের প্রদত্ত নাম। কারণ ভিলেনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে আগুন বের হয় কিনা!)
এ পর্যায়ে ছবিতে আর তেমন একটা মজা পেলাম না। নায়ক যতো বড় সু-পুরুষই হোক না কেন তাকে শেষ রক্ষা করেছিলেন সিনেমার নায়িকা ওরফে তার সহধর্মিনী। নায়কের কান থেকে ছোট্ট একটা যন্ত্র খুলে গেলে তার শ্রবণশক্তি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় তার ওয়াইফ উদ্ধারকারী জাহাজ হামযার মতো এসে তাকে উদ্ধার করল। এজন্য অবশ্য পরে বেচারা আয়রন ম্যানকে হলভর্তি নারীদের তালি আর পুরুষদের গালি হযম করতে হয়েছে সমানতালে! আবার কেন আয়রন ম্যানের ওয়াইফকে সুপার আয়রন ওম্যান বলা যাবে না এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে রুল জারি করে বসে আছেন! আর একারণেই হয়তো সিনেমার একেবারে শেষের দিকে আয়রন ম্যান তার বডি থেকে বিশেষ যন্ত্রগুলো অপারেশন করে তুলে ফেলেন এবং নিজেকে আয়রন ম্যানের পদ থেকে গুটিয়ে নেয়ার ইস্তফা দেন!
ছবি শেষ। আমরা হল থেকে বের হচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম গেটম্যানরা সকলের কাছ থেকে গিফট দেওয়া থ্রিডি চশমাগুলো গুণে গুণে ফেরত নিচ্ছেন। কেউ গিফট দিয়ে তা আবার ফেরত নেয় এটা এই জীবনে প্রথম দেখলাম! সবাই যখন চশমা ফেরত দিচ্ছে তখন ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকেও দিতে হলো। এ কারণে ৩জনেরই মন খারাপ। গেট থেকে বেড়িয়ে আসাদ ভাই হঠাৎ বিজয়ের হাসি দিয়ে বললেন, চশমা আনি নাই তো কি হইছে? চশমার প্যাকেটটা নিয়া আসছি! আর কান টানলেই মাথা আসে, তাই এবার শুধু প্যাকেট আসলেও নেক্সটটাইম চশমাও এসে যাবে! আসাদ ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটা ইটের নিচে চাপা পড়া ঘাসের মতো ফ্যাকাসে করে দিয়ে আমি আমার পকেট থেকে দুই দুইটা চশমার প্যাকেট বের করে দেখালাম। আর বললাম, আপনি যদি ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় চড়েন তবে আমি চড়ি প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে! অতঃএব কেউ কারো থেকে কম না! এরপর সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। তারপর বিদায় নিয়ে ছুটলাম যে যার গন্তব্যের দিকে।
যাই হোক, অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাঙ্খিত দিনে গেলাম বসুন্ধরা সিটিতে। সাথে ছিল বন্ধু সুমন এবং সিনে ঠাট্টার আসাদ ভাই। হলে ঢোকার আগেই ৩জনকে এক বিরাট ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিতে হলো! আর তা হলো লাইনে দাঁড়ানো। প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়ে আমি কিছুটা কনফিউশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ টিকেট হাতে এভাবে সচরাচর মানুষকে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখেছি, তাই বলে সিনেমা হলেও? আসাদ ভাই অনেকটা বোকা টাইপের মানুষ! ভুল করে সিনেমার বদলে বাসের টিকেট কেটে ফেলেছেন কিনা কে জানে! তো লাইন কিছুটা সামনে এগুতেই আমার কনফিউশন কাটল। বাস নয়, এটা আসলে হলে ঢোকারই লাইন। দেরিতে হলেও বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হলাম! এখানে অবাক করার মতো আরেকটা বিষয় ঘটল! আর তা হলো, হলে ঢোকার আগে গেটম্যান সবাইকে একটা করে চশমা গিফট করছেন! চশমা পেয়ে তো আসাদ ভাই বেজায় খুশি! তাই পাওয়ার সাথে সাথেই চশমাটা চোখে পড়ে নিলেন। এ দেখে গেটম্যান বললেন, স্যার এটা আসলে থ্রিডি চশমা। এটা পড়তে হয় মুভি দেখার সময়। নইলে এর আসল মজা পাবেন না। আসাদ ভাইও কম যান না! ভদ্রলোকের মুখের উপর বলে ফেললেন, আমাকে বোকা পাইছেন? আমি সবই জানি। তয় খালি একটু পরীক্ষা করে দেখলাম আপনারা চশমাটা আসল নাকি ডুপিকেট দিছেন!
এরপর ভদ্রলোকের মুখের হাসি মলিন হওয়ার আগেই আমরা হলের ভেতর ঢুকলাম। টিকেটের নাম্বারের দাপটে দখল করলাম যার যার সিট। তারপর শুরু হলো সিনেমা। ছবির স্টার্টআপেই আমরা ৩জন হতাশ! কারণ হল কতৃপক্ষ থ্রিডির পয়সা রাখলেও ছবির শুরুতে জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীত বাজালেন টু'ডিতে! এ নিয়ে হায়-হুতাশ করে লাভ নেই এটা বুঝতে পেরে ছবি দেখার প্রতি মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আবারো পিছু নিল সেই হতাশা! আমি ইংরেজীতে একটু দুর্বল। তাই ধারনা করেছিলাম আমার মতো যারা দুর্বল আছেন তাদের কথা চিন্তা করে হয়তো ছবি চলাকালীন স্ক্রীনে বাংলা সাবটাইটেলের ব্যবস্থা থাকবে! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলা দূরে থাক ইংরেজী, হিন্দী বা উর্দু কোনো সাবটাইটেলেরও দেখা মিলল না এই ছবিতে! তারপরও ছবি দেখতে লাগলাম কিছু বুঝে আর বেশিরভাগটাই না বুঝে। সমস্যা হলো ছবির নায়ক কে এটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না! প্রায় আধা ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর একটা দৃশ্যে ভিলেনের কয়েক’শ মিসাইল যখন টার্গেট মিস করে মাত্র একজনকে মারতে ব্যর্থ হচ্ছিলো তখন বুঝলাম এই একজনই হচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সেই নায়ক! কারণ এমন দৃশ্য অতীতে বাংলা-হিন্দী সিনেমায় বহুবার দেখেছি। ভিলেন যতো পাওয়ারফুলই হোক না কেন, সিম্পল একজন নায়ককে সে কখনোই মারতে পারেনা!
ছবির একটা দৃশ্যে ভিলেন প্লেন থেকে কয়েকজনকে নিচে ফেল দিল। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য উড়ে এলো আয়রন ম্যান। সে আবার চলে পুরাই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। আর তাই দর্শকের দাবী বিমান থেকে পড়তে থাকা লোকজনদেরকে একজন একজন করে সিলেক্ট না করে ডাইরেক্ট Ctrl+A চেপে সব্বাইকে সিলেক্ট করবে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু দর্শকদের দাবীর প্রতি কোনো প্রকার পরোয়া না করে নায়ক কাজ করতে লাগল সম্পূর্ণ ডেসটিনি পদ্ধতিতে! ডান হাত বাম হাত বাড়াতে বাড়াতে যখন সার্কেল পূর্ণ হলো তখনই সে সবাইকে উদ্ধার করে ফেলে দিল সমুদ্রে। ভাগ্যিস উদ্ধার হওয়া সকলেই সাঁতার জানত। নয়তো প্রাণ বাঁচানোর পরিবর্তে প্রাণ নাশের দায়ে আয়রন ম্যানকে যাবজ্জীবন জেল খাটতে হতো!
দেখতে দেখতে চলে এলো ছবির বিরতি। আসাদ ভাইকে বসতে বলে আমি আর সুমন গেলাম পপকর্ণ কিনতে। যিনি আমাদেরকে ৮০০ টাকার টিকিট গিফট করেছেন তাকে অন্তত ১০ টাকার পপকর্ণ খাওয়াতে পারব না এতোটা কৃপণ আমরা নই! কিন্তু বিল দেখে পুরা মাথায় হাত! মেজাজটাই গেল গরম হয়ে! ভাগ্যিস আমি একজন সাধারন ম্যান ছিলাম। আয়রন ম্যান হলে হয়তো এতক্ষণে গরমের চোটে শরীরের লোহা-লঙ্কর সব গলে যেতো! তাই মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য সাথে ৩টা পেপসিও কিনলাম। তারপর বিল মিটিয়ে ঢুকলাম হলের ভেতর। ফুডকোর্টে আমাদের দর কষাকষির মূহুর্তটা আসাদ ভাই দূর থেকে লুকিয়ে উপভোগ করছিলেন। বেচারাকে যতোটা বোকা মনে করছিলাম সে আসলে ততোটা বোকা না! সামনে গেলে যদি বিল দিতে হয় এই ভয়ে সে এতক্ষণ আমাদের সামনে আসেনি! আমরা পপকর্ণ আর পেপসি সমান ভাগে ভাগ করতে করতেই বিরতি শেষে ছবি পূনরায় আরম্ভ হলো। মুখে খাবার আর চোখে সানগ্লাস দিয়ে আবারও ছবি উপভোগ করতে লাগলাম। পেপসিতে দুই চুমুক দিতেই দেখি ক্যান খালি! নতুন এসেছি দেখে পরিমানে কম দিয়ে আমাদেরকে ঠকালো কিনা কে জানে! আসাদ ভাইকে বললাম, হোটেলে তো রুটির সাথে ভাজি নিলে তা কয়েকবার রিনিউ করা যায়। তো এখানেও সেই সিস্টেম চালু আছে কিনা? থাকলে ক্যানগুলো নিয়ে আবারও পেপসি ভরে আনতাম! আসাদ ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আস্তে বলেন। লোকজন শুনলে হাসবে! আমি বললাম, ধুর মিয়া ফান রাইটাররা কি দুয়েকটা মজার কথাও বলতে পারে না? নিজের ভুল বুঝতে পেরে আসাদ ভাই মুখে কয়েকটা পপকর্ণ ঠুসে দিয়ে চুপ মেরে রইলেন! হঠাৎ আবিষ্কার করলাম প্যাকেটের নিচের দিকের পপকর্ণ গুলো খুব একটা ভাজা হয়নি। এ দেখে আসাদ ভাই বললেন, ছবির ভিলেনর কাছ থেকে একটু আগুন এনে এগুলো আরও কড়া করে ভাজতে পারলে মন্দ হতো না! উলেখ্য যে, ছবির ভিলেন আবার ছিল একজন ফায়ার ম্যান! (আমাদের প্রদত্ত নাম। কারণ ভিলেনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে আগুন বের হয় কিনা!)
এ পর্যায়ে ছবিতে আর তেমন একটা মজা পেলাম না। নায়ক যতো বড় সু-পুরুষই হোক না কেন তাকে শেষ রক্ষা করেছিলেন সিনেমার নায়িকা ওরফে তার সহধর্মিনী। নায়কের কান থেকে ছোট্ট একটা যন্ত্র খুলে গেলে তার শ্রবণশক্তি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় তার ওয়াইফ উদ্ধারকারী জাহাজ হামযার মতো এসে তাকে উদ্ধার করল। এজন্য অবশ্য পরে বেচারা আয়রন ম্যানকে হলভর্তি নারীদের তালি আর পুরুষদের গালি হযম করতে হয়েছে সমানতালে! আবার কেন আয়রন ম্যানের ওয়াইফকে সুপার আয়রন ওম্যান বলা যাবে না এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে রুল জারি করে বসে আছেন! আর একারণেই হয়তো সিনেমার একেবারে শেষের দিকে আয়রন ম্যান তার বডি থেকে বিশেষ যন্ত্রগুলো অপারেশন করে তুলে ফেলেন এবং নিজেকে আয়রন ম্যানের পদ থেকে গুটিয়ে নেয়ার ইস্তফা দেন!
ছবি শেষ। আমরা হল থেকে বের হচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম গেটম্যানরা সকলের কাছ থেকে গিফট দেওয়া থ্রিডি চশমাগুলো গুণে গুণে ফেরত নিচ্ছেন। কেউ গিফট দিয়ে তা আবার ফেরত নেয় এটা এই জীবনে প্রথম দেখলাম! সবাই যখন চশমা ফেরত দিচ্ছে তখন ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকেও দিতে হলো। এ কারণে ৩জনেরই মন খারাপ। গেট থেকে বেড়িয়ে আসাদ ভাই হঠাৎ বিজয়ের হাসি দিয়ে বললেন, চশমা আনি নাই তো কি হইছে? চশমার প্যাকেটটা নিয়া আসছি! আর কান টানলেই মাথা আসে, তাই এবার শুধু প্যাকেট আসলেও নেক্সটটাইম চশমাও এসে যাবে! আসাদ ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটা ইটের নিচে চাপা পড়া ঘাসের মতো ফ্যাকাসে করে দিয়ে আমি আমার পকেট থেকে দুই দুইটা চশমার প্যাকেট বের করে দেখালাম। আর বললাম, আপনি যদি ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় চড়েন তবে আমি চড়ি প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে! অতঃএব কেউ কারো থেকে কম না! এরপর সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। তারপর বিদায় নিয়ে ছুটলাম যে যার গন্তব্যের দিকে।
লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ঠাট্টা, দৈনিক ইত্তেফাক (২১ জুলাই ২০১৩)

 
No comments:
Post a Comment