Tuesday, July 28, 2015

স্মার্টফোনের যতো আনস্মার্ট সুবিধা!

জকাল হাতে একটি স্মার্টফোন থাকলেই লোকে নিজেকে স্মার্ট ভাবা শুরু করে। কিন্তু আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনেরও যে বেশ কিছু আনস্মার্ট ফিচার থাকতে পারে এটা কেউ ভেবে দেখার টাইম পায় না। আর তাই আপনাদের হয়ে নিজের টাইম অপব্যয় করে স্মার্টফোনের আনস্মার্ট সুবিধাগুলোর কথা ভেবে দেখেছেন-  রবিউল ইসলাম সুমন

টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, বডি স্ক্যানার, ওয়েট মেশিন সহ প্রায় সবধরনের অ্যপসই পাওয়া যাবে আপনার স্মার্টফোনের জন্য, কিন্তু ব্যাবহার করা যাবে না এগুলার কোনোটাই!
স্মার্টফোনে কিছুক্ষণ গেমস খেললে আপনার ফোনসেটটি এতো বেশি গরম হবে যা দেখে মনে হবে আপনি হাতে আগুনের গোলা নিয়ে খেলছেন!
স্মার্টফোনের চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়, যার ফলে সারাক্ষণ চার্জার সাথে নিয়ে ঘুরতে হবে!
অধিকাংশ স্মার্টফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরায় তোলা ছবি ভোটার আইডি কার্ডের ছবি থেকেও খারাপ হবে।
স্মার্টফোনের সাইজ বড় হয় বিদায় পকেটে রাখা মুশকিল হয়ে যায়। ফলে আপনার স্মার্টফোনটিকে আনস্মার্টের মতো হাতে নিয়ে ঘুরতে হবে!
কিছু কিছু স্মার্টফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি এতোই নিম্নমানের হয় যে মোবাইলে কথা বলতে বা গান শুনতে হলে আপনাকে এক্সট্রা সাউন্ড বক্স সাথে নিয়ে ঘুরতে হতে পারে!
‘দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয় তবে দাগই ভালো’ এই কথাটি সম্ভবত আপনার স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ আপনার স্মার্টফোন যতো ইউজ করবেন ততোই এর স্ক্রীনে দাগ পরবে। আর সেই দাগ সারাতে হলে আপনাকে বার বার টাকা খরচ স্ক্রীন পেপার বা স্ক্রীন প্রটেক্টর ইউজ করতে হবে!

লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: রকমারি রম্য, বাংলাদেশ প্রতিদিন
(১৪ জুলাই ২০১৫)

Sunday, July 19, 2015

ঈদ রিলেটেড কিছু আষাঢ়ে নিউজ!

টিভি-পত্রিকায় প্রতি ঈদে বার বার একই ধরনের নিউজ শুনে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু কখনো যদি সেই নিউজগুলোর বিপরীত কিছু শুনতে পেতাম তাহলে কেমন হতো? যেহেতু বাস্তবে এটা সম্ভব নয়, তাই নিউজগুলোকে আষাঢ়ে হিসেবেই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছেন প্যাঁচআলের প্রতিনিধি- রবিউল ইসলাম সুমন


এবারের ঈদে রেলষ্টেশন গুলো একেবারেই জনমানব শূন্য। আগাম টিকিট দূরে থাক রেগুলার টিকিটের যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো ষ্টেশনে। ফলে রেল কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। যাত্রীর অভাবে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর পর ছাড়তে হচ্ছে সবকটি ট্রেন। আর ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত যেসব রেল আনা হয়েছিল সেগুলোও পড়ে আছে একদম অলস।

কোনো লঞ্চেই এবার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নৌ-মালিক কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক যাত্রীরই বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নিষেধ সত্ত্বেও লঞ্চের ছাদে উঠার চেষ্টা করলে এক যুবককে প্রথমে জরিমানা এবং পরে লঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

ঈদে দ্রব্যমূল্যের দাম না বাড়ায় ক্রেতা সাধারনের বিক্ষোভ। দাম বাড়ানোর জন্য বিক্রেতাদেরকে ৪৮ঘন্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিলেন ক্রেতাদের একাংশ। উল্যেখিত সময়ের মধ্যে পন্যসামগ্রীর দাম বাড়ানো না হলে আরো কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি। অন্যদিকে নিজেদের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে একেবারে অটল থাকবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার ঈদে দেশের কোথাও কোনো যানজট নেই। যানজটে পড়ার ভয়ে যারা কয়েক ঘন্টা হাতে নিয়ে বের হয়েছিলেন তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই গন্তব্যে পৌছে গেছেন। এ নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট হলেও কেউ কেউ আবার অসন্তোষ আর আফসোসও প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবী এতো দ্রুত পৌছাতে পারবেন জানলে তারা কখনোই বাস ধরার জন্য তাড়াহুড়া করে সকালবেলায় গিয়ে বাস স্টপে বসে থাকতেন না।

দেশের বাজারে এবার বিদেশী পোশাকের একদম চাহিদা নেই। ক্রেতাদের ভীড় এখন দেশী পোশাকের দিকেই। আর তাই ক্রেতাদের স্লোগান এখন একটাই। সেটা হলো, দেশী পন্য কিনে হোন ধন্য আর বাজারে এবার বিক্রয়ের শীর্ষে আছে মফিজ, কুলসুম, ফুলবানু এবং আবুল ড্রেস।

ঈদে এবার রাজপথে চাঁদাবাজি একদমই নেই। এর ফলে যাত্রী এবং বাস মালিকদের মনে স্বস্তি। খুশিতে অনেক বাস মালিককে যাত্রীদের মাঝে মিষ্টি বিতরনও করতে দেখা গেছে। আর চাঁদাবাজি না থাকায় বাস মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার দুটি টিকিট কিনলে সাথে একটি ফ্রি টিকিটও গিফট করছেন যাত্রীদেরকে।

ঈদের শেষ মূহুর্তেও দেশের মার্কেট আর শপিংমল গুলোতে নেই ক্রেতাদের উপস্থিতি। শপিংয়ের নামে বিলাসীতা না করে অনেক ক্রেতাই এবার তাদের পোশাকের জন্য জমানো টাকা অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন গরীব-দুঃখীদের মাঝে।

ঈদে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে পেরেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর তাই দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই। ফলে জনগণ খুশি হয়ে বিদ্যুৎ না পেয়ে অতীতে যেসব বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করেছিল সেগুলো নিজেদের উদ্যোগেই মেরামত করবে বলে জানিয়েছে।

এবারের ঈদে সকল টিভি-চ্যানেল আর পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিহীন খবর আর অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকল গণমাধ্যম। ফলে বিজ্ঞাপন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরও কোথাও মিলছে না বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও দর্শকরা যে বেশ খুশি তা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআলদৈনিক সমকাল
(২১ জুলাই ২০১৪)

Wednesday, July 15, 2015

গুগল Play Store এর অ্যাপস পিসি থেকে ডাউনলোডের সহজ উপায়!

প্রথমে যেই ফাইল বা অ্যাপসটি আপনি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে চান তার লিংকটি Copy করুন। এরপর আপনার কপি করা লিংকটি এই ওয়েবসাইটে গিয়ে Paste করুন। তারপর নিচের বক্সে থাকা Generate Download Link এ ক্লিক করুন। এবার দেখুন নিচে Download অপশন চলে এসেছে! ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলটি ডাউনলোড করুন পিসি থেকেই।

Tuesday, July 7, 2015

বাড়িওয়ালীর কাছ থেকে পাওয়া প্রথম পত্র!


বাড়িওয়ালার মেয়েদের প্রতি সবারই কম-বেশি আগ্রহ থাকে। আমারও যে আগ্রহ নেই, এটাই বা বলি কী করে! আর বাড়িওয়ালাটি যদি হয় ঢাকা কিংবা তার আশপাশের কোনো এলাকার এবং তার মেয়েটিও যদি হয় হালকা-পাতলা সুন্দরী টাইপের, তবে তো কোনো কথাই নেই!

আমার আব্বা একজন সরকারি কর্মচারী। কাজের জন্য তাকে প্রতি বছরই এ অঞ্চল থেকে ও অঞ্চলে বদলি হয়ে যেতে হয়। আর আব্বার অঞ্চল বদল মানেই আমাদেরও বাসা বদলের লক্ষণ! প্রায় প্রতি বছরই আমরা নতুন বাড়ি এবং বাড়িওয়ালার সান্নিধ্য পাই। ভাগ্যগুণে এ বছর পেয়ে গেলাম এক বাড়িওয়ালীর সান্নিধ্য! বাড়িওয়ালা থাকেন দেশের বাইরে। আর তাই আমরা এ বছর যে নতুন বাড়িতে উঠেছি, তার দেখাশোনার পুরোপুরি দায়িত্ব বাড়িওয়ালার স্ত্রী ওরফে বাড়িওয়ালীর কাঁধে। আব্বার মুখে শুনেছি, বাড়িওয়ালীর কাজে হেল্প করার জন্য হেল্পার হিসেবে আছেন তারই দুই মেয়ে। তো নতুন বাড়ি, বাড়িওয়ালী আর তার দুই মেয়ের মুখ দর্শনে আশা করছি এবারের বছরটা আমাদের ভালোই কাটবে।

যাই হোক, মাসের ১ তারিখে নিজেদের সহায়-সম্বল আর শীতের লেপ-কম্বল যা ছিল তাই নিয়ে উঠে গেলাম নতুন বাসায়। ফ্যামিলির বড় ছেলে হিসেবে আমার কাঁধে অলওয়েজ ম্যালা দায়-দায়িত্ব থাকে। এই যেমন কোথাও বাসা পাল্টালে বাসার মালপত্র সব নিজের কাঁধে করে বহন আর জিনিসপত্রগুলো ঠিকঠাকমতো সাজানো-গোছানো করা আর কি! আমাদের এবারের বাসাটি ভাড়া করা হলো চারতলায়। তিনতলায় থাকেন বাড়িওয়ালী এবং ওনার মেয়েরা। তো মালামাল নিয়ে ওপরে ওঠার সময় হঠাৎ মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। আশপাশে তাকিয়ে দেখি তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুন্দরী এক মেয়ে আমাকে দেখে হাসছে। বুঝতে পারলাম তিনি আমাদের বাড়িওয়ালীরই মেয়ে। তবে মেয়েটি কেন আমাকে দেখে হাসলো এটা বোঝার সামর্থ্য আপাতত হলো না। বাসায় মালামাল সব ওঠানোর পর আব্বা, আম্মা, আমি আর ছোট ভাইবোন সবাই মিলে জিনিসপত্র সব গোছাতে লাগলাম। এমন সময় বারান্দায় দেখা সেই মেয়েটি এলো আমাদের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে। বলল, আপনারা নতুন এসেছেন। এখনও হয়তো সম্পূর্ণ মালামাল গোছাতে আর রান্নার চুলা বসাতে পারেননি। তাই আম্মু আপনাদের জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়েছেন। আমার আম্মা মেয়েটির হাত থেকে খাবারগুলো নিয়ে টেবিলে রাখলেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় করলেন। খাবার খেয়ে আমরা আবারও জিনিসপত্র গোছানোর কাজে নেমে পড়লাম এবং বিকালের মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক জায়গামতো গুছিয়ে রাখতে সক্ষম হলাম।

দেখতে দেখতে নতুন বাসায় কেটে গেল আমাদের পুরো একটি সপ্তাহ। এর মধ্যেই প্রতিবেশী বাড়িওয়ালী এবং তার মেয়েদের সঙ্গে আমাদের ভালো সখ্যতা হয়ে গেল। বাড়িওয়ালীর ছোট মেয়েটির নাম টিনা। সেই আমাদের খাবার নিয়ে এসেছিল এবং আমাকে প্রথম দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হেসেছিল। আম্মার মুখে শুনলাম, বাড়িওয়ালীর বড় মেয়েটি বিবাহিত এবং তার দু’টি সন্তানও নাকি আছে। আর ছোট মেয়েটি পড়ে ভার্সিটিতে। তার ব্যাপারে খুব একটা ইনফরমেশন পাওয়া গেল না। আমিও ভার্সিটির স্টুডেন্ট। অতএব টিনার সঙ্গে একটা রিলেশন করতে পারলে মন্দ হয় না!

কেটে গেল আরও একটি সপ্তাহ। এ সপ্তাহে টিনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। পেয়ে গেলাম টিনার ফেসবুক আইডির সন্ধান। টিনা আমাকে তার ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করে নেয়। এরপর সময়-অসময়ে শুরু হয় তার সঙ্গে চ্যাটিং। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমি দুর্বল হতে লাগলাম। বুঝতে পারলাম এটা আসলে প্রেমে পড়ার-ই লক্ষণ! টিনারও কি একই অবস্থা? জানি না। তবুও ইচ্ছে হলো টিনাকে প্রপোজ করার। ফেসবুক, স্কাইপির ডিজিটাল যুগেও ঠিক করলাম এনালগ কায়দায় রঙিন খামে চিঠি লিখে টিনাকে প্রপোজ করব। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লাম রঙিন খাম আর প্যাডের সন্ধানে। লাইব্রেরি থেকে কিনে আনলাম সব। এরপর মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে ফেললাম একটা চিঠি। তারপর বুকে সাহস সঞ্চয় করে চিঠিটা দিয়ে দিলাম টিনার হাতে। আমার সামনেই টিনা চিঠিটা পড়ল। পড়া শেষে কিছু না বলে চুপচাপ বাসায় চলে গেল। সে রাগ করল নাকি হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।

দুই দিন পর হঠাৎ বাড়িওয়ালী এসে হাজির আমাদের বাসায়। দরজার কড়া নাড়তেই আমি দরজা খুলে ওনাকে ভেতরে আসতে বললাম। উনি জানতে চাইলেন আমার আব্বা কোথায়? বললাম, ভেতরে আছেন। এরপর তিনি আর কিছু না বলে সোজা ভেতরের রুমে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ওনার হাতে খেয়াল করলাম সোনালি কালারের একটা খাম। তবে কি উনি আমার আব্বাকে...(!), দূর ছাই! কী ভাবছি এসব। ওনার তো স্বামী আছেনই! তাহলে হাতে এটা কিসের খাম? চুপি চুপি নজর রাখলাম ভেতরের রুমে। দেখলাম বাড়িওয়ালী আব্বার হাতে খামটা দিয়ে কী জানি সব বলছেন। এরপর তিনি চলে গেলেন। বাড়িওয়ালী আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই আব্বা খাম খুলে একটা চিঠি বের করলেন। চিঠিটা পড়ে তিনি রাগত স্বরে আমাকে ডাকলেন। কাছে যাওয়ার পর বেশ কয়েকদফা ঝাড়ি ডেলিভারি দিলেন। ভাবলাম চিঠিতে বাড়িওয়ালী আব্বাকে কী এমন লিখলেন যে, আব্বা আমার ওপর ক্ষেপে গেলেন? আব্বা বকতে বকতে চিঠিটা আমার ওপর ছুঁড়ে মারলেন। ফ্লোর থেকে চিঠিটা উঠিয়ে আমি পড়া শুরু করলাম। দেখলাম তাতে বেশ সুন্দর হাতের অক্ষরে লেখা—

জনাব, 
দু’দিনের মধ্যে আপনারা আমার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন। আপনার ছেলের সাহস দেখে আমি অবাক হলাম। সে আমার মেয়ে টিনাকে প্রেমপত্র লিখেছে। ব্যাপারটা শুনে টিনার প্রবাসী স্বামী প্রচণ্ড রাগ করেছে। আমার মেয়ের জামাই অনতিবিলম্বে আপনাদের এই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে বলেছে। আশা করছি নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে আপনারা দু’দিনের মধ্যেই বাড়িটি ছেড়ে চলে যাবেন। আর যদি স্বেচ্ছায় না যান তবে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব।
ইতি
আপনাদের বাড়িওয়ালী

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ভিমরুল, আমারদেশ 
(১০ জানুয়ারি ২০১৩)

Monday, July 6, 2015

ভাষার প্রতি ভাসা প্রেম!

কালে বন্ধু আসিফের ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে আসিফ বলে উঠল, ‘সুপ্রভাত দোস্ত।’ আসিফের মুখে ‘সুপ্রভাত’ কথাটি শুনে আমি যেন হঠাৎ আকাশ থেকে পড়লাম! কারণ যে বন্ধু জাগরণে দূরে থাক, গভীর রাতের স্বপ্নেও কোনোদিন বাংলায় কথা বলতে চায় না, তার মুখ থেকে আচমকা এরকম খাঁটি বাংলা শব্দ শুনলে চমকে যাওয়ারই কথা। যাই হোক, দেরি না করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, কিরে, আজ হঠাৎ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উপস্থাপকদের মতো এমন শুদ্ধ বাংলায় উইশ করলি যে? জবাবে আসিফ বলল, তুই জানিস এটা কী মাস? বললাম, হুম... জানি। এটা ফেব্রুয়ারি মাস, তাতে কী?
— তাতে কী মানে? তুই জানিস না এটা আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস? বলল আসিফ।
— এটাও জানি, কিন্তু ভাষা আন্দোলনের মাস বলে হয়েছেটা কী?
এবার আসিফের মুখে শুনতে পেলাম রাগী একটা স্বর। সে বলতে লাগল, আরে ব্যাটা, ভাষা আন্দোলনের মাসে দেশের প্রতি আমাদের একটা কর্তব্য আছে না! যে ভাষার জন্য মানুষজন প্রাণ দিয়েছে, সেই ভাষার জন্য প্রাণ না দিই কিন্তু সব ভাষাশহীদের প্রতি কি আমরা একটু শ্রদ্ধাবোধও দেখাতে পারি না?
— অবশ্যই পারিস। কিন্তু কীভাবে দেখাবি বল?
— কেন, এই যে এভাবে? এই মাসে বেশি বেশি বাংলা ওয়ার্ড ইউজ করে!
আসিফের এমন জগাখিচুড়িমার্কা কথা শুনে যে কারোরই রাগ উঠতে পারে। আমারও উঠল। বললাম, সারা বছর ঠুসঠাস ইংরেজিতে কথা বলে কেবল একটি মাস বাংলায় কথা বলার রেওয়াজ করলেই বুঝি তা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখানো হয়ে যায়, তাই না রে? এবার খানিকটা চুপসে গেল আসিফ। কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে হঠাৎ ঠাস করে বলে বসল, শালা তুই একটা রাজাকার! তোর নিজের তো ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই-ই, উল্টো আমাদের মতো তরুণ প্রজন্মের ভাষাপ্রেমীদের ওপর আক্রমণ করাটাই যেন তোর কাজ! এবার আসিফের কথায় আমি না হেসে পারলাম না! তবু আর বেশি কথা না বলে বিষয়টাকে এখানেই থামিয়ে দিলাম।
এরপর আসিফের সঙ্গে কথা শেষ করে বিছানা থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। একটু পর কলেজে যেতে হবে, তাই নাস্তার জন্য অপেক্ষা করছি। নাস্তা রেডি হতে হতে ভাবলাম, ফেসবুক থেকে একটু উঁকি মেরে আসা যাক। ব্যস, বসলাম কম্পিউটারে। ফেসবুক লগইন করামাত্রই দেখি আরেক কাণ্ড! নিজের হোমপেজ আর বন্ধুদের প্রোফাইল পিকচারজুড়ে শুধুই বাংলা বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষরের ছড়াছড়ি! হঠাৎ-ই বড় ধরনের কোনো অক্ষরবিপর্যয় হলো কিনা চিন্তায় পড়ে গেলাম! এমন সময় আমার এক বন্ধু অর্ণব চ্যাট বক্সে কড়া নাড়ল। তার প্রোফাইলেও দেখি বড় করে লেখা আছে বাংলা বর্ণমালার ‘অ’ বর্ণটি। তাই জিজ্ঞেস করলাম, তোর প্রোফাইলে ‘অ’ লিখে রেখেছিস ক্যান? এর মানে কী? অর্ণব বলল, ‘অ’-তে ‘অর্ণব’ মানে তার নিজেরই নাম!
— তাহলে শুধু ‘অ’ ক্যান? পুরো নাম লিখলেই তো পারিস!
— আরে না। যার নাম যে অক্ষর দিয়ে শুরু, শুধু ওই অক্ষরটি দিলেই বেশি সুন্দর লাগে!
— তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিটা মুছে ওখানেও একটা অক্ষর ঝুলিয়ে রাখ! এতে নিজের বীভত্স চেহারাটা আর কাউকে দেখাতে হবে না, আবার দেখতেও সুন্দর লাগবে!!
— দেখ, এটা নিয়ে কোনো তামাশা করবি না। সহ্য করব না বলে দিলাম।
— আচ্ছা যা, করলাম না; কিন্তু তোরা সবাই এই অক্ষরগুলো দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাস, এটা তো বলতে পারিস?
— প্রমাণ করতে চাই মানে? এটা হলো আমাদের মাতৃভাষা- প্রেম। বাংলাকে যে আমরা কতটা ভালোবাসি তা বিশ্বকে জানাতে হবে না!
— ও! ফেসবুক আইডিতে নিজের ছবির জায়গায় বর্ণমালার একটি অক্ষর দিয়ে রাখলেই যে এটা মাতৃভাষার প্রতি প্রেম হয়ে যায়, তা আমার জানা ছিল না!
ইতোমধ্যেই অর্ণব একটা লিংক পাঠিয়ে দিয়ে বলল, এখান থেকে তুই ও নিজের নামের প্রথম অক্ষরটা সুন্দরভাবে বানিয়ে প্রোফাইলে সেট করতে পারবি।
আমি আর কোনো রিপ্লাই না দিয়ে সোজা লগ আউট হলাম। এরপর ফেসবুক থেকে বের হয়ে সোজা কলেজের পথে পা বাড়ালাম।
কলেজে এসে প্রথমেই দেখা হয়ে গেল বন্ধু রাসেলের সঙ্গে। রাসেলের বেশভূষার দিকে নজর দিয়ে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না! যে বন্ধু সারা বছর চুলে জেল দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সে কিনা আজ এসেছে খাঁটি সরিষার তেল মেখে! আবার পরনে চিরচেনা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং ইংলিশ জার্সির বদলে সে পরে এসেছে সিম্পল একসেট পাঞ্জাবি-পাজামা! এখানেই শেষ নয়, দেখি তার পাঞ্জাবিতে আবার লেখা রয়েছে দেশীয় সব বর্ণমালা! আগের দুই বন্ধুর ঘটনায় বুঝতে বাকি নেই যে, রাসেলের এই পরিবর্তনের কারণও হচ্ছে ভাষার প্রতি প্রেম! তাই তাকে আর অযথা কোনো প্রশ্ন করলাম না। চুপচাপ ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাস শেষে দুপুরে কলেজ ক্যান্টিনে গেলাম হালকা কিছু খাওয়ার জন্য। মজার ব্যাপার হলো, বন্ধুদের মতো ক্যান্টিনের চেহারাও আজ বদলে গেছে! ক্যান্টিনে ঢুকেই আজ আর শীলা-মুন্নি বা চিকনি চামেলীর গান শুনতে হলো না। এদের পেছনে ফেলে ক্যান্টিনের টেপরেকর্ডারে বাজতে থাকল সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের গান! ক্যান্টিন বয়কে বললাম—কী রে, ভাষা আন্দোলনের মাস বলে বুঝি আজ হিন্দি গানের বদলে পুরনো দিনের বাংলা গান বাজাচ্ছিস? বয় হেসে বলল, অ্যাগেইন জিগায় মামু! শত হইলেও এইটা ভাষার মাস। এ মাসে কি আর হিন্দি গান বাজানো যায়? এরপর আর কোনো কথা নয়। ক্যান্টিন থেকে দু’টি সিঙ্গাড়া আর এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
দুপুরে বাসায় ফিরেও দেখি সারাদিনের সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! অর্থাৎ আবারও ভাষা-প্রেম। এবারের প্রেমটা আর বন্ধুদের নয়, এটা স্বয়ং আমার ভাবীর! বাসায় ফিরেই দেখতে পেলাম ভাবী তার চিরচেনা হিন্দি সিরিয়ালের বদলে বাংলা নাটক দেখছেন টিভিতে। যদিও অবাক হওয়ার কিছু নেই, তবু প্রশ্ন করে বসলাম, ভাষার মাসের কারণে বুঝি এই মাসে আর হিন্দি সিরিয়াল দেখবেন না, তাই না? ভাবী মুচকি হেসে জানান, ঠিক ধরেছিস। এ মাসে আর নো মোর হিন্দি সিরিয়াল। এখন থেকে টিভি দেখব বাংলায়, কথাও বলব বাংলায়! ভাবীর কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কারণ তিনি হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখতে হিন্দি ভাষাটাও আয়ত্ত করে ফেলেছেন। যার ফলে কথা বলার সময় বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে তিনি এমন কিছু শব্দ বলে বসেন, যা বুঝতে গেলে আমাদের প্রায় দাঁত ভাঙার উপক্রম হয়! এ মাসের উছিলায় অন্তত কিছুদিন তার এমন উদ্ভট কথা থেকে নিস্তার পাব এটা ভেবেই স্বস্তি লাগল। এরপর ভাবীর কাছে জানতে চাইলাম, কাজের বুয়া কোথায়? সে আজ আসেনি? ভাবী বললেন, না আসেনি। তাকে কী দরকার? বললাম, চা খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু বুয়া তো আসেনি। এখন কী করে যে খাই? এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাবী বলে উঠলেন —
‘উসকে লিয়ে টেনশান নেহি লেনেকা! ম্যায় হু না!!’
যাই হোক, ভাবীর কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে বিকেলে টিউশনিতে গেলাম এক ছাত্রীর বাসায়। সারা দিনের ঝক্কি-ঝামেলার পর এ সময়টায় নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয়। ছাত্রীর মা শরবত তৈরি করে দিলেন খাওয়ার জন্য। সঙ্গে দিলেন বিস্কুট আর চানাচুর। হঠাৎ নিশাত (ছাত্রীর নাম) বলে উঠল, স্যার, আম্মু বলেছে আজ বেশি করে বাংলা হ্যান্ডরাইটিং করাতে। হায়! এখানেও দেখি সবার মধ্যে ভাষাপ্রেম! কী আর করা! নিশাতকে বললাম ঠিক আছে, 'বাংলা আমার মাতৃভাষা' এই লাইনটি ২০ বার লেখ। নিশাত লিখতে বসে গেল। নিশাত পড়ে ক্লাস থ্রি তে। ইংরেজিতে সে পটু হলেও বাংলায় খুবই কাঁচা। অতএব ২০ লাইন লিখতে তার মিনিমাম ১ ঘণ্টা লাগার কথা। তাই নিশাতকে লিখতে দিয়ে আমি বসে পত্রিকা পড়ছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২০ মিনিটেই নিশাত বলল, স্যার লেখা শেষ! সব ঠিকঠাক আছে কি না চেক করার জন্য নিশাতের খাতাটা হাতে নিলাম। খাতার দিকে তাকাতেই আমার চোখ প্রায় কপালে! কারণ নিশাত 'বাংলা আমার মাতৃভাষা' কথাটি ২০ বার লিখেছে ঠিকই, কিন্তু তার লেখার ধরন ছিল এ রকম 
Bangla Amar Matri Basha...
Bangla Amar Matri Basha...
Bangla Amar Matri Basha!!!

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
যৌথপ্রকাশ: ঘোড়ার ডিম, কালের কণ্ঠ (১৭ ফেব্রয়ারি ২০১৩)
ভিমরুল, আমারদেশ (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)