Tuesday, July 7, 2015

বাড়িওয়ালীর কাছ থেকে পাওয়া প্রথম পত্র!


বাড়িওয়ালার মেয়েদের প্রতি সবারই কম-বেশি আগ্রহ থাকে। আমারও যে আগ্রহ নেই, এটাই বা বলি কী করে! আর বাড়িওয়ালাটি যদি হয় ঢাকা কিংবা তার আশপাশের কোনো এলাকার এবং তার মেয়েটিও যদি হয় হালকা-পাতলা সুন্দরী টাইপের, তবে তো কোনো কথাই নেই!

আমার আব্বা একজন সরকারি কর্মচারী। কাজের জন্য তাকে প্রতি বছরই এ অঞ্চল থেকে ও অঞ্চলে বদলি হয়ে যেতে হয়। আর আব্বার অঞ্চল বদল মানেই আমাদেরও বাসা বদলের লক্ষণ! প্রায় প্রতি বছরই আমরা নতুন বাড়ি এবং বাড়িওয়ালার সান্নিধ্য পাই। ভাগ্যগুণে এ বছর পেয়ে গেলাম এক বাড়িওয়ালীর সান্নিধ্য! বাড়িওয়ালা থাকেন দেশের বাইরে। আর তাই আমরা এ বছর যে নতুন বাড়িতে উঠেছি, তার দেখাশোনার পুরোপুরি দায়িত্ব বাড়িওয়ালার স্ত্রী ওরফে বাড়িওয়ালীর কাঁধে। আব্বার মুখে শুনেছি, বাড়িওয়ালীর কাজে হেল্প করার জন্য হেল্পার হিসেবে আছেন তারই দুই মেয়ে। তো নতুন বাড়ি, বাড়িওয়ালী আর তার দুই মেয়ের মুখ দর্শনে আশা করছি এবারের বছরটা আমাদের ভালোই কাটবে।

যাই হোক, মাসের ১ তারিখে নিজেদের সহায়-সম্বল আর শীতের লেপ-কম্বল যা ছিল তাই নিয়ে উঠে গেলাম নতুন বাসায়। ফ্যামিলির বড় ছেলে হিসেবে আমার কাঁধে অলওয়েজ ম্যালা দায়-দায়িত্ব থাকে। এই যেমন কোথাও বাসা পাল্টালে বাসার মালপত্র সব নিজের কাঁধে করে বহন আর জিনিসপত্রগুলো ঠিকঠাকমতো সাজানো-গোছানো করা আর কি! আমাদের এবারের বাসাটি ভাড়া করা হলো চারতলায়। তিনতলায় থাকেন বাড়িওয়ালী এবং ওনার মেয়েরা। তো মালামাল নিয়ে ওপরে ওঠার সময় হঠাৎ মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। আশপাশে তাকিয়ে দেখি তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুন্দরী এক মেয়ে আমাকে দেখে হাসছে। বুঝতে পারলাম তিনি আমাদের বাড়িওয়ালীরই মেয়ে। তবে মেয়েটি কেন আমাকে দেখে হাসলো এটা বোঝার সামর্থ্য আপাতত হলো না। বাসায় মালামাল সব ওঠানোর পর আব্বা, আম্মা, আমি আর ছোট ভাইবোন সবাই মিলে জিনিসপত্র সব গোছাতে লাগলাম। এমন সময় বারান্দায় দেখা সেই মেয়েটি এলো আমাদের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে। বলল, আপনারা নতুন এসেছেন। এখনও হয়তো সম্পূর্ণ মালামাল গোছাতে আর রান্নার চুলা বসাতে পারেননি। তাই আম্মু আপনাদের জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়েছেন। আমার আম্মা মেয়েটির হাত থেকে খাবারগুলো নিয়ে টেবিলে রাখলেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় করলেন। খাবার খেয়ে আমরা আবারও জিনিসপত্র গোছানোর কাজে নেমে পড়লাম এবং বিকালের মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক জায়গামতো গুছিয়ে রাখতে সক্ষম হলাম।

দেখতে দেখতে নতুন বাসায় কেটে গেল আমাদের পুরো একটি সপ্তাহ। এর মধ্যেই প্রতিবেশী বাড়িওয়ালী এবং তার মেয়েদের সঙ্গে আমাদের ভালো সখ্যতা হয়ে গেল। বাড়িওয়ালীর ছোট মেয়েটির নাম টিনা। সেই আমাদের খাবার নিয়ে এসেছিল এবং আমাকে প্রথম দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হেসেছিল। আম্মার মুখে শুনলাম, বাড়িওয়ালীর বড় মেয়েটি বিবাহিত এবং তার দু’টি সন্তানও নাকি আছে। আর ছোট মেয়েটি পড়ে ভার্সিটিতে। তার ব্যাপারে খুব একটা ইনফরমেশন পাওয়া গেল না। আমিও ভার্সিটির স্টুডেন্ট। অতএব টিনার সঙ্গে একটা রিলেশন করতে পারলে মন্দ হয় না!

কেটে গেল আরও একটি সপ্তাহ। এ সপ্তাহে টিনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। পেয়ে গেলাম টিনার ফেসবুক আইডির সন্ধান। টিনা আমাকে তার ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করে নেয়। এরপর সময়-অসময়ে শুরু হয় তার সঙ্গে চ্যাটিং। ধীরে ধীরে তার প্রতি আমি দুর্বল হতে লাগলাম। বুঝতে পারলাম এটা আসলে প্রেমে পড়ার-ই লক্ষণ! টিনারও কি একই অবস্থা? জানি না। তবুও ইচ্ছে হলো টিনাকে প্রপোজ করার। ফেসবুক, স্কাইপির ডিজিটাল যুগেও ঠিক করলাম এনালগ কায়দায় রঙিন খামে চিঠি লিখে টিনাকে প্রপোজ করব। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লাম রঙিন খাম আর প্যাডের সন্ধানে। লাইব্রেরি থেকে কিনে আনলাম সব। এরপর মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে ফেললাম একটা চিঠি। তারপর বুকে সাহস সঞ্চয় করে চিঠিটা দিয়ে দিলাম টিনার হাতে। আমার সামনেই টিনা চিঠিটা পড়ল। পড়া শেষে কিছু না বলে চুপচাপ বাসায় চলে গেল। সে রাগ করল নাকি হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।

দুই দিন পর হঠাৎ বাড়িওয়ালী এসে হাজির আমাদের বাসায়। দরজার কড়া নাড়তেই আমি দরজা খুলে ওনাকে ভেতরে আসতে বললাম। উনি জানতে চাইলেন আমার আব্বা কোথায়? বললাম, ভেতরে আছেন। এরপর তিনি আর কিছু না বলে সোজা ভেতরের রুমে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ওনার হাতে খেয়াল করলাম সোনালি কালারের একটা খাম। তবে কি উনি আমার আব্বাকে...(!), দূর ছাই! কী ভাবছি এসব। ওনার তো স্বামী আছেনই! তাহলে হাতে এটা কিসের খাম? চুপি চুপি নজর রাখলাম ভেতরের রুমে। দেখলাম বাড়িওয়ালী আব্বার হাতে খামটা দিয়ে কী জানি সব বলছেন। এরপর তিনি চলে গেলেন। বাড়িওয়ালী আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই আব্বা খাম খুলে একটা চিঠি বের করলেন। চিঠিটা পড়ে তিনি রাগত স্বরে আমাকে ডাকলেন। কাছে যাওয়ার পর বেশ কয়েকদফা ঝাড়ি ডেলিভারি দিলেন। ভাবলাম চিঠিতে বাড়িওয়ালী আব্বাকে কী এমন লিখলেন যে, আব্বা আমার ওপর ক্ষেপে গেলেন? আব্বা বকতে বকতে চিঠিটা আমার ওপর ছুঁড়ে মারলেন। ফ্লোর থেকে চিঠিটা উঠিয়ে আমি পড়া শুরু করলাম। দেখলাম তাতে বেশ সুন্দর হাতের অক্ষরে লেখা—

জনাব, 
দু’দিনের মধ্যে আপনারা আমার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন। আপনার ছেলের সাহস দেখে আমি অবাক হলাম। সে আমার মেয়ে টিনাকে প্রেমপত্র লিখেছে। ব্যাপারটা শুনে টিনার প্রবাসী স্বামী প্রচণ্ড রাগ করেছে। আমার মেয়ের জামাই অনতিবিলম্বে আপনাদের এই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে বলেছে। আশা করছি নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে আপনারা দু’দিনের মধ্যেই বাড়িটি ছেড়ে চলে যাবেন। আর যদি স্বেচ্ছায় না যান তবে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব।
ইতি
আপনাদের বাড়িওয়ালী

লেখক: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: ভিমরুল, আমারদেশ 
(১০ জানুয়ারি ২০১৩)

No comments:

Post a Comment