Sunday, July 19, 2015

ঈদ রিলেটেড কিছু আষাঢ়ে নিউজ!

টিভি-পত্রিকায় প্রতি ঈদে বার বার একই ধরনের নিউজ শুনে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু কখনো যদি সেই নিউজগুলোর বিপরীত কিছু শুনতে পেতাম তাহলে কেমন হতো? যেহেতু বাস্তবে এটা সম্ভব নয়, তাই নিউজগুলোকে আষাঢ়ে হিসেবেই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছেন প্যাঁচআলের প্রতিনিধি- রবিউল ইসলাম সুমন


এবারের ঈদে রেলষ্টেশন গুলো একেবারেই জনমানব শূন্য। আগাম টিকিট দূরে থাক রেগুলার টিকিটের যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো ষ্টেশনে। ফলে রেল কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। যাত্রীর অভাবে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর পর ছাড়তে হচ্ছে সবকটি ট্রেন। আর ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত যেসব রেল আনা হয়েছিল সেগুলোও পড়ে আছে একদম অলস।

কোনো লঞ্চেই এবার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নৌ-মালিক কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক যাত্রীরই বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নিষেধ সত্ত্বেও লঞ্চের ছাদে উঠার চেষ্টা করলে এক যুবককে প্রথমে জরিমানা এবং পরে লঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

ঈদে দ্রব্যমূল্যের দাম না বাড়ায় ক্রেতা সাধারনের বিক্ষোভ। দাম বাড়ানোর জন্য বিক্রেতাদেরকে ৪৮ঘন্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিলেন ক্রেতাদের একাংশ। উল্যেখিত সময়ের মধ্যে পন্যসামগ্রীর দাম বাড়ানো না হলে আরো কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি। অন্যদিকে নিজেদের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে একেবারে অটল থাকবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার ঈদে দেশের কোথাও কোনো যানজট নেই। যানজটে পড়ার ভয়ে যারা কয়েক ঘন্টা হাতে নিয়ে বের হয়েছিলেন তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই গন্তব্যে পৌছে গেছেন। এ নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট হলেও কেউ কেউ আবার অসন্তোষ আর আফসোসও প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবী এতো দ্রুত পৌছাতে পারবেন জানলে তারা কখনোই বাস ধরার জন্য তাড়াহুড়া করে সকালবেলায় গিয়ে বাস স্টপে বসে থাকতেন না।

দেশের বাজারে এবার বিদেশী পোশাকের একদম চাহিদা নেই। ক্রেতাদের ভীড় এখন দেশী পোশাকের দিকেই। আর তাই ক্রেতাদের স্লোগান এখন একটাই। সেটা হলো, দেশী পন্য কিনে হোন ধন্য আর বাজারে এবার বিক্রয়ের শীর্ষে আছে মফিজ, কুলসুম, ফুলবানু এবং আবুল ড্রেস।

ঈদে এবার রাজপথে চাঁদাবাজি একদমই নেই। এর ফলে যাত্রী এবং বাস মালিকদের মনে স্বস্তি। খুশিতে অনেক বাস মালিককে যাত্রীদের মাঝে মিষ্টি বিতরনও করতে দেখা গেছে। আর চাঁদাবাজি না থাকায় বাস মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার দুটি টিকিট কিনলে সাথে একটি ফ্রি টিকিটও গিফট করছেন যাত্রীদেরকে।

ঈদের শেষ মূহুর্তেও দেশের মার্কেট আর শপিংমল গুলোতে নেই ক্রেতাদের উপস্থিতি। শপিংয়ের নামে বিলাসীতা না করে অনেক ক্রেতাই এবার তাদের পোশাকের জন্য জমানো টাকা অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন গরীব-দুঃখীদের মাঝে।

ঈদে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে পেরেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর তাই দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই। ফলে জনগণ খুশি হয়ে বিদ্যুৎ না পেয়ে অতীতে যেসব বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করেছিল সেগুলো নিজেদের উদ্যোগেই মেরামত করবে বলে জানিয়েছে।

এবারের ঈদে সকল টিভি-চ্যানেল আর পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিহীন খবর আর অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকল গণমাধ্যম। ফলে বিজ্ঞাপন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরও কোথাও মিলছে না বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও দর্শকরা যে বেশ খুশি তা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআলদৈনিক সমকাল
(২১ জুলাই ২০১৪)

No comments:

Post a Comment