আমি লেখালেখি খুব
একটা করি না। আর যদি করি তবে কোনো সম্পাদকই আমাকে পাত্তা দেয় না! মানে কেউই লেখা
ছাপতে চায় না আর কি! তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র আমি নই। আশায় বুক আর নিরাশায়
মুখ ফুলিয়ে লিখেই চলেছি একের পর এক বাতিল লেখা। একদিন আমার বন্ধু রাসেল আইডিয়া দিল
লেখাগুলোকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য। আইডিয়াটা হলো নিজের লেখাগুলোকে একসঙ্গে জড়ো করে
একটা বই বের করতে হবে। রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু কে ছাপবে আমার বই?
বড়ই টেনশনিত
ব্যাপার! সমাধানও পেয়ে গেলাম। নিজের লেখাগুলোকে স্ট্যাপলারের পিন মেরে মেরে তৈরি
করে ফেললাম আস্ত একটা পাণ্ডুলিপি। এরপর পাণ্ডুলিপি সমেত রওনা দিলাম বাংলাবাজারের
দিকে। শুনেছি সেখানে অনেক প্রকাশক নতুন লেখকদের বই বের করার জন্য আশায় বুক বেঁধে
রাখে। তাই তাদের আশার ওপর ভরসা রেখে পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হলাম বাংলাবাজারে।
কিন্তু হায়... এখানে এসে জানতে পারলাম, কোনো প্রকাশকই টাকা ছাড়া বই ছাপাবে না! তাই
আমার আশার গুড়ে এখন বালু পড়ার অবস্থা! অবশেষে এক প্রকাশককে অনেক বলে-কয়ে বিনা
পয়সায় একটা বই বের করতে রাজি করাতে পারলাম। প্রকাশকের হাতে পাণ্ডুলিপি তুলে দিয়ে
আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে, এবারের বইমেলায় আমারও একটা বই থাকছে। অতএব আমার
নেক্সট স্টেপ হচ্ছে বইটা যেন চলে তার জন্য একটু আধটু প্রচার-প্রচারণা করা। ব্যস,
নেমে পড়লাম
প্রচারণার কাজে।
দেখতে দেখতে চলে এলো বইমেলা। আর এদিকে বই নিয়ে আমার প্রচারণা ছিল তুঙ্গে! শহরের মোড় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা অলিগলিতেও নিজের বইয়ের পোস্টার, লিফলেট টানিয়ে দিলাম। আর পরিচিতদের হাতে তুলে দিতে লাগলাম বইয়ের সৌজন্যে একটা করে ক্যালেন্ডার একদম ফ্রিতে! এখন আমি নিজ এলাকার একজন টপ তারকাখ্যাতি সম্পন্ন লেখক। রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেয়াল দখল করে পোস্টারিং করার কারণে আমার নাম আর ফেইস মহল্লার পোলাপান থেকে শুরু করে বুড়ো নানা-দাদারাও জানে। আর বন্ধুরা তো অলরেডি আমাকে লেখক ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকেই না! সেই সঙ্গে বন্ধুরা আশ্বস্ত করল যে, তারা সবাই আমার বইটা কিনবে। কিন্তু শর্ত হলো বই কেনার আগে সবাইকে একবেলা খাওয়াতে হবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ঠিক করলাম মেলায় যাওয়ার আগে সবাই মিলে একটা হোটেলে খাব অ্যান্ড দ্যান একসঙ্গে বইটা কিনব।
দেখতে দেখতে চলে এলো বইমেলা। আর এদিকে বই নিয়ে আমার প্রচারণা ছিল তুঙ্গে! শহরের মোড় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা অলিগলিতেও নিজের বইয়ের পোস্টার, লিফলেট টানিয়ে দিলাম। আর পরিচিতদের হাতে তুলে দিতে লাগলাম বইয়ের সৌজন্যে একটা করে ক্যালেন্ডার একদম ফ্রিতে! এখন আমি নিজ এলাকার একজন টপ তারকাখ্যাতি সম্পন্ন লেখক। রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেয়াল দখল করে পোস্টারিং করার কারণে আমার নাম আর ফেইস মহল্লার পোলাপান থেকে শুরু করে বুড়ো নানা-দাদারাও জানে। আর বন্ধুরা তো অলরেডি আমাকে লেখক ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকেই না! সেই সঙ্গে বন্ধুরা আশ্বস্ত করল যে, তারা সবাই আমার বইটা কিনবে। কিন্তু শর্ত হলো বই কেনার আগে সবাইকে একবেলা খাওয়াতে হবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ঠিক করলাম মেলায় যাওয়ার আগে সবাই মিলে একটা হোটেলে খাব অ্যান্ড দ্যান একসঙ্গে বইটা কিনব।
কথামতো বন্ধুরা সবাই একদিন চলে গেলাম বইমেলায়। প্রথমে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করলাম একটা রেস্টুরেন্টে। এরপর গেলাম বাংলা একাডেমিতে। বইমেলায় ঢুকে সরাসরি চলে গেলাম নিজের বই যে প্রকাশনী থেকে বের হওয়ার কথা তার স্টলে। সেখানে গিয়ে অনেক খুঁজেও ডিসপ্লেতে নিজের বইটা না পেয়ে অবশেষে সেলসম্যানদের হেল্প নিলাম। বইয়ের নাম বলতেই তারা স্টলের এক কোনা থেকে বইটা বের করে আনলেন। এরপর বইটা তুলে দিলাম সবার হাতে। বই হাতে পেয়ে বন্ধুরা সবাই প্রায় বিস্মিত! আর আমি বিস্মিত ওদের চেয়ে ডাবল! কারণ বইয়ে লেখকের জায়গায় আমার নামের বদলে ছিল অন্য আরেকটি নাম। আর সেই নামটি হলো প্রকাশকের নিজের!
লেখা ও আঁকা: রবিউল ইসলাম সুমন
প্রথম প্রকাশ: প্যাঁচআল, দৈনিক সমকাল
(২২ ফেব্রয়ারি ২০১৬)

 
No comments:
Post a Comment