থেরাপিতে মজার লেখা আর কার্টুন আঁকতে আঁকতে নিজেরাও মাঝে মাঝে অনেক মজার ঘটনার সম্মুখীন হই। সেখান থেকেই আজ আপনাদের সামনে তিনটি ঘটনা তুলে ধরছি...
ঘটনা-১
আমি যে এলাকায় থাকি সে এলাকায় কোনো পত্রিকা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও হকার মহোদয়গণ ২টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র পত্রিকার সাথে দেওয়া ম্যাগাজিনটা বিক্রি করতে চান না! আর তাই আমাকে থেরাপি সংগ্রহ করার জন্য অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। তো একদিন থেরাপি কিনে আনার পর সেটা নিয়ে এলাকার এক চায়ের দোকানে বসলাম চা খাওয়ার জন্য। আমি চা খাচ্ছি এমন সময় মহল্লার এক মুরব্বী এসে আমার পাশে বসলেন। তিনি দোকান থেকে একটা কেক নিলেন। কেক খাওয়ার পর ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন; ভাতিজা, তোমার হাতের পেপারটা একটু দাও তো। আমি ভাবলাম, তিনিও হয়তো আমার মতোই থেরাপির একজন অন্ধ ভক্ত। আর তাই কোনো সংকোচ না করে থেরাপিটা ওনার হাতে দিয়ে দিলাম। উনি থেরাপিটা হাতে নিলেন আর এদিকে আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। এরপর যা দেখলাম তাতে মনে হলো আমার কলিজার একপাশ কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে! দেখি ভদ্রলোক থেরাপিটা হাতে নিয়েই এক টানে তিনি এর বুক থেকে মাঝের ২টা পৃষ্ঠা ঠাস করে ছিঁড়ে ফেললেন! আর এটা করেছেন তিনি শুধুমাত্র নিজের হাতটি মোছার জন্য!! তখন মনের মাঝে যথেষ্ট আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও মুরব্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে ওনাকে কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু চা টা খেয়ে আবারো দূরের পথে হাঁটা ধরলাম নতুন আরেকটা থেরাপি সংগ্রহ করার জন্য!
ঘটনা-২
একবার কলেজ থেকে বন্ধুদের নিয়ে আহসান মঞ্জিলে গেলাম আড্ডা দেওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে আমরা সবাই মাঠে বসে গল্প শুরু করলাম। এমন সময় আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন এক ঝালমুড়ি ওয়ালা। আড্ডাটাকে আরো জমজমাট করার উদ্দেশ্যে আমরা সবার জন্য মুড়ির অর্ডার দিলাম। এর পর গল্প করতে করতে আমাদের হাতে চলে আসলো ঝালমুড়ির প্যাকেট। তখন সবাই মিলে মুড়ি খাওয়ার ওপর জোর দিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে পড়ল মুড়ির ঠোঙ্গার ওপর। যে কাগজ দিয়ে ঠোঙ্গাটা বানানো হয়েছে সেটা কেমন জানি চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলাম, এটা আসলে থেরাপিরই একটা পেইজ! আর পেইজে যা লেখা ছিল তার লেখক আর কেউ নন, এই অধম নিজেই! অর্থাৎ আমারই একটি লেখা ছিল সেই মুড়ির ঠোঙ্গায়! ব্যাপারটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার পর তারা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠল। আর তাদের হাসিতে কাটা ঘায়ে নুনের সাথে মরিচের ছিটা যোগ করতে শামিল হলেন ঝালমুড়ি ওয়ালা নিজেও! এর পর বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল; দোস- দেখ, তোর লেখা আমরা না পড়লেও ঝালমুড়ি ওয়ালারা আর ঠোঙ্গা ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই পড়ে!
ঘটনা-৩
আমি যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম ওনার বাসায় সব সময় নয়াদিগন্ত পত্রিকা রাখা হতো। তবে স্যার বা ওনার স্টুডেন্টদের কেউ ভুলেও জানত না যে আমি লেখালেখির সাথে জড়িত। একদিন পরীক্ষার আগে স্যারের বাসায় গেলাম পড়ার জন্য। সে দিন আমি নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘন্টা আগে স্যারের বাসায় পৌছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি স্যার তখন নাইন-টেন এর ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। আমি রুমে ঢুকে স্যারের পাশের একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম। এমন সময় স্যার ১০মিনিটের জন্য সবাইকে বসতে বলে একটা জরুরি কাজে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লেন। তখন আমি বসে বসে নিজের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম, আর অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা কেউ নিজেদের পড়া পড়ছে, কেউ লিখছে আবার কেউ বা পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে। পত্রিকা পড়তে পড়তে হঠাৎ একজনের চোখ পড়ল থেরাপির দিকে। সে থেরাপিটা হাতে নিয়ে দুইটা পেইজ উল্টাতে না উল্টাতেই বলে উঠল, থেরাপি খুললেই এই শালার কার্টুন দেখা যায়! থেরাপি নিয়ে যেহেতু আমার আগ্রহের কোনো কমতি নেই তাই নিজের পড়া রেখে আমি তখন ওই ছাত্রের হাতের দিকে উঁকি দিলাম। এর পর যা দেখলাম তা আর নিজের মুখে বয়ান করার মতো নয়! কারণ ছাত্রটি যেই কার্টুনিষ্টকে প্রতি সংখ্যায় থেরাপির পাতায় দেখে বলে অভিযোগ ও গালি দিয়েছে সে যে অন্য কেউ নয়, আমি নিজেই!! তবে এতে কিন্তু আমি মন খারাপ করিনি। আবার কোনো রকম রাগ বা কষ্টও পাইনি। কারন আমি জানি সে যেই অভিযোগ বা গালিটি দিয়েছে এটা আসলে কোনো না কোনো ভাবে পাঠকদের পক্ষ থেকে লেখকদের জন্য একটা অন্যরকম ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ! আর আজব হলেও সত্য যে, সে দিন তাদের সামনে নিজের পরিচয়টুকু তুলে ধরার সাহস পাইনি!!
লেখক: সুমন আহমেদ
প্রকাশ: থেরাপি, নয়াদিগন্ত (০৭-০৩-২০১২)
.jpg)
 
No comments:
Post a Comment