Thursday, March 15, 2012

লোডশেডিংয়ের টানে, কাছে আনে!


মেয়েটির নাম শোভা। থাকে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে। দেখতে যতটা সুন্দরী, তার চাইতে বেশি মনে হয় অহংকারী! আসলে মেয়েটিকে এভাবে ঠাস করে অহংকারী বলে ফেলাটা হয়তো আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু কী করব বলেন? প্রথম দেখার পর থেকে শোভার সাথে কিঞ্চিত কথা বলার কত্ত ট্রাই করলাম, অথচ সে আমাকে কোনো পাত্তাই দিলো না। আরে বাবা, আমার চেহারা-সুরত না হয় সিনেমার নায়কের মতো না হয়ে অনেকটা ভিলেনের মতো হয়েছে। তাই বলে ভিলেন চেহারার লোকেরা কি মানুষ না? তারা কি কারো সাথে মনখুলে কথাও বলতে পারবে না? এগুলো ভাবতে ভাবতে প্রায়ই আমার মনটা উদাস হয়ে যায়।
দেখতে দেখতেই চলে আসলো গরমকাল। শীতের পর যেমন গরম আসে, ঠিক তেমনি গরম আসলেই লোডশেডিং আসবে এটাই স্বাভাবিক! আর তাই তো গরম আসতে না আসতেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। এখন দিনের ১২ ঘন্টা (কখনো বা তারও বেশি সময়) বাসাবাড়িতে কারেন্ট থাকে না। এ তো গেল শহরের কথা, গ্রামাঞ্চলে কী অবস্তা তা একমাত্র গ্রামবাসীরই মালুম! তবে যেখানেই যত ঘন্টা লোডশেডিং হোক না কেন, এ নিয়ে দেশবাসী ওরফে সাধারণ জনগণের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সকলের দাবি একটাই; আর তা হলো- কারেন্ট তো যায় না, মাঝে-মধ্যে আসে আর কি! তবে এ নিয়ে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই তা-ও কিন্তু নয়। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলে, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের কোনো উন্নয়ন না হইলেও লোডশেডিংয়ের উন্নয়ন হইছে ব্যাপক হারে! তাই তো রাত আড়াইটার সময় ঘুম ভাঙলেও দেখি লোডশেডিং চলছে। আবার আরেক বন্ধুকে বলতে শুনি, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌছাতে না পারলেও হারিকেনের আলো পৌছে দিয়েছে খুব সহজেই! পরের কথা ছেড়ে এবার নিজের কথায় আসি। ছোটবেলা থেকেই লোডশেডিং আমার খুব প্রিয় একটা জিনিসের নাম ছিল। কারণ একমাত্র লোডশেডিংয়ের অজুহাত দেখিয়েই স্কুলের হোমওয়ার্ক বা পড়ালেখা নিয়ে ফাঁকিবাজি করতে পারতাম। পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা এসবের অজুহাতে হোমওয়ার্ক না করলে স্যারদের বেত্রাঘাত থেকে মুক্তি পাওয়াটা বেশ মুশকিল হয়ে যেতো। কিন্তু লোডশেডিয়ের অজুহাত দেখালে এক সেকেন্ডেই সব কিচ্ছা খতম হয়ে যেতো। সবাই বিশ্বাস করত যে ঘটনা সইত্য! কারণ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে নাই বা লোডশেডিং সম্পর্কে সাধারণ নলেজ নাই এমন ইনসান এই বাংলার মাটিতে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না!
আমার এলাকায় মনে হয় গরমের মাত্রাটা অন্যান্য এলাকার চাইতে একটু বেশি। আর তাই তো সন্ধার পর লোডশেডিং হলে লোকজনকে হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে করতে রাস্তায় নামতে দেখি। মাঝে মধ্যে আমারও ইচ্ছে করে তাদের সাথে যোগ দিতে, কিন্তু শরমের কারণে রাস্তায় আর নামা হয় না। তবে রাস্তায় না নামলেও লোডশেডিং হলে ঘরে বসে থাকতে পারি না। আর তাই বাতাস এবং মশার কামড় খেতে রওনা দেই বাড়ির ছাদের দিকে। আমার ছাদে যাওয়ার পেছনে অবশ্য আরো একটা কারণ আছে। আর তা হলো- যতবারই লোডশেডিং হয় ততবারই শোভাকে ছাদের দিকে রওনা হতে দেখা যায়। আর শোভা একা একা ছাদে গেলে আমি ঘরের মধ্যে একলা বসে থাকব নাকি? তাই আমিও তার পেছন পেছন ছাদে চলে যাই। তবে একসাথে ছাদে গেলেও শোভা কখনোই নিজ থেকে আমার সাথে কোনো কথা বলে না। আবার আমি তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে সে খুব নিখুঁতভাবেই আমার কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। এভাবে এড়িয়ে যেতে যেতে একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে সপ্তম দিনের মাথায় সে নিজ থেকেই আমার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলো। এ দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে গরমের মাত্রাটা মনে হয় একটু বেশি ছিল। আমি লোডশেডিংয়ের সময় ছাদে উঠে দেখলাম শোভা ছাদের মাঝখানে একটা শীতলপাটি বিছিয়ে বসে আছে। তখন গরমের কারণে শোভা তার ওড়না দিয়ে নিজের শরীরে বাতাস করছিল। কিন্তু এতে কি আর বাতাস লাগে? এ দিকে আমার হাতে ছিল একটা তালপাতার পাখা। এটি দেখে শোভা আমাকে মিষ্টি সুরে কাছে ডাকল। আমাকে বলল তার পাশে বসার জন্য। আমি বসার পর সে আমার হাতের পাখাটা তার হাতে দিতে বলল। আমি দিয়ে দিলাম। এর পর এটা দিয়ে সে বাতাস করতে লাগল দুজনার দিকে। সুযোগ পেয়ে আমিও তার হাতের বাতাস (সাথে মশার কামড়) খাচ্ছি এবং গল্প করে যাচ্ছি শোভার সাথে। এভাবে গল্প করতে করতে আমরা দুজন একসময় দুজনার ভালো বন্ধুতে পরিণত হলাম।
যেহেতু লোডশেডিং এখন প্রতিদিনকার সঙ্গী, তাই রুটিন করে আমরাও প্রতিদিন ছাদে উঠে গল্প করতে লাগলাম। আমাদের মাঝের বন্ধুত্বের বন্ধনটা হতে লাগল আরো গভীর থেকে গভীর। আর এর সবটাই সম্ভব হয়েছে একমাত্র লোডশেডিংয়ের কল্যানে!
লেখক: সুমন আহমেদ
প্রথম প্রকাশ: থেরাপি, নয়াদিগন্ত (১৪-০৩-২০১২)

Friday, March 9, 2012

থেরাপি নিয়ে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা!


থেরাপিতে মজার লেখা আর কার্টুন আঁকতে আঁকতে নিজেরাও মাঝে মাঝে অনেক মজার ঘটনার সম্মুখীন হই। সেখান থেকেই আজ আপনাদের সামনে তিনটি ঘটনা তুলে ধরছি...

ঘটনা-১
আমি যে এলাকায় থাকি সে এলাকায় কোনো পত্রিকা পাওয়া যায় নাআর পাওয়া গেলেও হকার মহোদয়গণ ২টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র পত্রিকার সাথে দেওয়া ম্যাগাজিনটা বিক্রি করতে চান না! আর তাই আমাকে থেরাপি সংগ্রহ করার জন্য অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়তো একদিন থেরাপি কিনে আনার পর সেটা নিয়ে এলাকার এক চায়ের দোকানে বসলাম চা খাওয়ার জন্যআমি চা খাচ্ছি এমন সময় মহল্লার এক মুরব্বী এসে আমার পাশে বসলেনতিনি দোকান থেকে একটা কেক নিলেনকেক খাওয়ার পর ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন; ভাতিজা, তোমার হাতের পেপারটা একটু দাও তোআমি ভাবলাম, তিনিও হয়তো আমার মতোই থেরাপির একজন অন্ধ ভক্তআর তাই কোনো সংকোচ না করে থেরাপিটা ওনার হাতে দিয়ে দিলামউনি থেরাপিটা হাতে নিলেন আর এদিকে আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলামএরপর যা দেখলাম তাতে মনে হলো আমার কলিজার একপাশ কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে! দেখি ভদ্রলোক থেরাপিটা হাতে নিয়েই এক টানে তিনি এর বুক থেকে মাঝের ২টা পৃষ্ঠা ঠাস করে ছিঁড়ে ফেললেন! আর এটা করেছেন তিনি শুধুমাত্র নিজের হাতটি মোছার জন্য!! তখন মনের মাঝে যথেষ্ট আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও মুরব্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে ওনাকে কিছুই বলতে পারলাম নাশুধু চা টা খেয়ে আবারো দূরের পথে হাঁটা ধরলাম নতুন আরেকটা থেরাপি সংগ্রহ করার জন্য!

ঘটনা-২
একবার কলেজ থেকে বন্ধুদের নিয়ে আহসান মঞ্জিলে গেলাম আড্ডা দেওয়ার জন্যসেখানে গিয়ে আমরা সবাই মাঠে বসে গল্প শুরু করলামএমন সময় আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন এক ঝালমুড়ি ওয়ালাআড্ডাটাকে আরো জমজমাট করার উদ্দেশ্যে আমরা সবার জন্য মুড়ির অর্ডার দিলামএর পর গল্প করতে করতে আমাদের হাতে চলে আসলো ঝালমুড়ির প্যাকেটতখন সবাই মিলে মুড়ি খাওয়ার ওপর জোর দিলামএর মধ্যে হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে পড়ল মুড়ির ঠোঙ্গার ওপরযে কাগজ দিয়ে ঠোঙ্গাটা বানানো হয়েছে সেটা কেমন জানি চেনা চেনা মনে হচ্ছিলভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলাম, এটা আসলে থেরাপিরই একটা পেইজ! আর পেইজে যা লেখা ছিল তার লেখক আর কেউ নন, এই অধম নিজেই! অর্থাৎ আমারই একটি লেখা ছিল সেই মুড়ির ঠোঙ্গায়! ব্যাপারটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার পর তারা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলআর তাদের হাসিতে কাটা ঘায়ে নুনের সাথে মরিচের ছিটা যোগ করতে শামিল হলেন ঝালমুড়ি ওয়ালা নিজেও! এর পর বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল; দোস- দেখ, তোর লেখা আমরা না পড়লেও ঝালমুড়ি ওয়ালারা আর ঠোঙ্গা ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই পড়ে!

ঘটনা-৩
আমি যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম ওনার বাসায় সব সময় নয়াদিগন্ত পত্রিকা রাখা হতোতবে স্যার বা ওনার স্টুডেন্টদের কেউ ভুলেও জানত না যে আমি লেখালেখির সাথে জড়িতএকদিন পরীক্ষার আগে স্যারের বাসায় গেলাম পড়ার জন্যসে দিন আমি নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘন্টা আগে স্যারের বাসায় পৌছে গিয়েছিলামগিয়ে দেখি স্যার তখন নাইন-টেন এর ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেনআমি রুমে ঢুকে স্যারের পাশের একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লামএমন সময় স্যার ১০মিনিটের জন্য সবাইকে বসতে বলে একটা জরুরি কাজে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লেনতখন আমি বসে বসে নিজের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম, আর অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা কেউ নিজেদের পড়া পড়ছে, কেউ লিখছে আবার কেউ বা পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছেপত্রিকা পড়তে পড়তে হঠাৎ একজনের চোখ পড়ল থেরাপির দিকেসে থেরাপিটা হাতে নিয়ে দুইটা পেইজ উল্টাতে না উল্টাতেই বলে উঠল, থেরাপি খুললেই এই শালার কার্টুন দেখা যায়! থেরাপি নিয়ে যেহেতু আমার আগ্রহের কোনো কমতি নেই তাই নিজের পড়া রেখে আমি তখন ওই ছাত্রের হাতের দিকে উঁকি দিলামএর পর যা দেখলাম তা আর নিজের মুখে বয়ান করার মতো নয়! কারণ ছাত্রটি যেই কার্টুনিষ্টকে প্রতি সংখ্যায় থেরাপির পাতায় দেখে বলে অভিযোগ ও গালি দিয়েছে সে যে অন্য কেউ নয়, আমি নিজেই!! তবে এতে কিন্তু আমি মন খারাপ করিনিআবার কোনো রকম রাগ বা কষ্টও পাইনিকারন আমি জানি সে যেই অভিযোগ বা গালিটি দিয়েছে এটা আসলে কোনো না কোনো ভাবে পাঠকদের পক্ষ থেকে লেখকদের জন্য একটা অন্যরকম ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ! আর আজব হলেও সত্য যে, সে দিন তাদের সামনে নিজের পরিচয়টুকু তুলে ধরার সাহস পাইনি!!
লেখক: সুমন আহমেদ
প্রকাশ: থেরাপি, নয়াদিগন্ত (০৭-০৩-২০১২)

Thursday, March 1, 2012

এখন শুধু ভাবী!

দানীং আমার কী যে হলো কিছুই বুঝতে পারি না। খেতে, বসতে, শুতে এমনকি ঘুমাতে পর্যন্ত ইচ্ছে করে না। ভাগ্যিস পোশাক পরিধানের সময় এমন অনীহা হয় না। হলে যে কী বিব্রতকর অবস্থায় পড়তাম তা আল্লাহ মালুম! তো আমার এই অনীহাপ্রীতির মূল কারণ যে প্রেম, ইহা বোধ করি আজকালকের ফিডার খাওয়া পোলাপানও অনুমান করতে পারে। আর যদি কেউ ইহা অনুমান করিতে ব্যর্থ হয়, তবে সে হচ্ছে আমার ক্লাসমেট প্রিয়া! অবশ্য তার অনুমান না করার পেছনে যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান ছিল। কোথায় যেন শুনেছিলাম- ‘একটি মেয়ে যখন প্রেমে পড়ে তখন তার প্রেমে পড়ার বিষয়টি একমাত্র সেই মেয়েটি ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। অথচ একটি ছেলে যখন নাকি কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তখন দুনিয়ার সবাই বিষয়টি জেনে যায়, শুধু জানতে পারে না ওই মেয়েটি!’ যেহেতু আমি ছেলেদের ক্যাটাগরিতেই পড়ি, তাই আমার বেলাতেও এর কোনো ব্যাতিক্রম হয়নি। অর্থ্যাৎ, দুনিয়ার সবাই জানত আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার ক্লাসমেট প্রিয়া কখনো এটি জানতে বা বুঝতে পারেনি। আর এভাবেই লুকোচুরির মাধ্যমে কোনো রকমে ঠেলেঠুলে চলছিল আমাদের… থুক্কু! আমার প্রেম।

প্রিয়া আমার ভালোবাসার কথা না জানলেও তার সাথে আমার বন্ধুটা কিন্তু বেশ ভালোই ছিল। আর তাই তো প্রেমের টানেই হোক কিংবা হোক বন্ধুত্বের টানে সে কলেজের পাশাপাশি রেগুলার আমাদের বাসায়ও যাতায়াত করত। এমনকি আমি বাসায় না থাকলেও নাকি প্রিয়া এসে আমাদের বাসার সামনে উঁকি-ঝুঁকি মেরে যেত। তার এরকম উঁকি-ঝুঁকি মারার কারণটাকে আমি অবশ্য পড়ালেখার প্রতি ভীষণ দুর্বলতা এবং আমার প্রতি প্রবল আগ্রহ আছে বলে মনে করতাম! আর তাই তো সব সময় নানান কায়দায় প্রিয়াকে শুধু হেল্প করার সুযোগ খুঁজতাম। কিন্তু বিরক্ত হতাম তখন যখন প্রিয়ার মুখে আমার চেয়ে আমার বড় ভাইয়ের বেশি প্রশংসা শুনতাম। আমার ক্লাসমেট আমাকে ছেড়ে কেন আমার বড় ভাইয়ের প্রশংসা বেশি করবে এটাই বুঝে উঠতে পারতাম না।
যাই হোক- প্রিয়াকে না জানিয়ে তার সাথে লুকোচুরি প্রেম তো অনেক করলাম, এবার আর না। যে করেই হোক তাকে আমি প্রপোজ করে ছাড়বই। এখন কিভাবে কী করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় বসলাম। চিন্তা করতে করতে কখন যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাছে চলে আসলো তার কোনো টেরই পেলাম না। ভাবলাম এই তো সুযোগ! এবারের ভ্যালেন্টাইনেই না হয় প্রিয়াকে নিজের মনের কথা জানাব। কিন্তু যেই ভাবা সেই মোতাবেক কাজ আর করা হলো না। অর্থ্যাৎ মনের মাঝে সাহসের ঘাটতি থাকায় ভ্যালেন্টাইনের দিন প্রিয়াকে প্রপোজ করার ভাবনাটাকে আর বাস্তবে রূপ দেওয়া গেল না।
এ দিকে এই ভ্যালেন্টাইনের দিনে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার এক বন্ধুর জন্মদিন পড়ে গেল। সারা জীবন দেখে আসলাম, যে দিন যার জন্মদিন হয় সে দিন সে তার বন্ধুবান্ধব আর আত্বীয়স্বজনদের নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়ায়। কিন্তু আমার বেলায় হলো তার ঠিক উল্টো! অর্থ্যাৎ জন্মদিনের দিন সেই বন্ধুটি নিজেই এসে আমাকে ধরল এই দিন তাকে ভালো কোনো হোটেলে নিয়ে কিছু খাওয়ানোর জন্য! আমি অবশ্য প্রথমে তার অনুরোধ থেকে বাইন মাছের মতোন মোচর দিয়ে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। কারণ এখানেও আমার ভাগ্য আমাকে সহায়তা করেনি। অতএব তাকে হোটেলে নিয়ে খাওয়ানো বাদে আর কোনো গতি নেই। বিকেলে সেই বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলাম শহরের এক নামহীন চাইনিজ হোটেলে! খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজের পকেট থেকে কোরবান করলাম নগদ ৪৮০ টাকা। এরপর তাকে বিদায় জানানোর পর হোটেল থেকে বের হতে গিয়ে দেখলাম সেখানের এক কোনার টেবিলে মোটামুটি বড় ধরনের আয়োজন করে খাবার সাজিয়ে বসে আছে আমার ক্লাসমেট ওরফে মনের মানুষ প্রিয়া! দেখে বেশ অবাক হলেও কিছুই বলার ছিল না। আস্তে আস্তে তার টেবিলের সামনে যেতেই সেও আমাকে দেখে তাৎক্ষণিক অবাক হওয়ার ভান করল। কুশল বিনিময়ের পর আমি তার টেবিলের বিপরীত দিকের চেয়ারটায় বসতে চাইলে সে আপত্তি জানিয়ে বলল, জায়গাটা নাকি অন্য একজনের জন্য রিজার্ভ করা আছে। আমি বললাম, কে সেই একজন? জবাবে প্রিয়া জানায় তার ভালোবাসার মানুষ! এই কথা শুনে আমার মাথার তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আরো ১০৮ ডিগ্রি বেড়ে গেল। মনে মনে বললাম, শালা তুই যেই হোস না ক্যান আজ তোকে আমি দেখেই ছাড়ব। (এখানে তাকে শুধু দেখে নেওয়ার কথা বলেছি। কোনো কিছু করার কথা কিন্তু আর আমি বলিনি। কারণ, আমার মাঝে আবার সাহসের মাত্রাতিরিক্ত অভাব আছে কিনা!)
দেখতে দেখতেই চলে আসলো প্রিয়ার সেই ভালোবাসার মানুষ। তো যাকে দেখার জন্য আমি এতক্ষন মনে মনে বাঘের মত গর্জে উঠেছিলাম, সেই তাকে দেখার পর যেন পুরো ভেজা বিলাই হয়ে গেলাম! আর বিলাই না হয়েই বা কী করার আছে? কারণ প্রিয়ার ভালোবাসার মানুষ আর অন্য কেউ নয়, তিনি সাক্ষাৎ আমারই আপন বড় ভাই! এখন যেই ভাইয়ার সামনে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় পাই সেই ভাইয়ার সামনে তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের বলে দাবি করার মত ততটা সাহসী মানব আমি নই! আর তাই তো তাকে পাশ কাটিয়ে কোনো রকমে হোটেল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু লাভ হলো না। ভাইয়া আমাকে দেখে ফেললেন প্রিয়ার সাথে কথা বলা অবস্থায়। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, এখানে কেন এসেছিস? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল তাই সে আমাকে খাওয়ানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। খাওয়া শেষে দেখলাম প্রিয়া এখানে বসে আছে। তাই তার সাথে কথা বলছিলাম। ভাইয়া বললেন, প্রিয়াকে তুই চিনিস? বললাম, হুম… আমরা একই ক্লাসে পড়ি। এরপর ভাইয়া বললেন, ঠিক আছে এখন বাসায় চলে যা। আর শোন, আমি যে প্রিয়ার সাথে হোটেলে খাবার খেতে এসেছি এটা কিন্তু বাসায় কাউকে বলিস না। আমি বললাম- জি আচ্ছা, বলব না। এরপর ভাইয়াকে বললাম, ঠিক আছে আমি তাহলে এখন যাই। ভাইয়া বললেন, আচছা যা।
এ দিকে আমাদের দুই ভাইয়ের কথাবার্তা গুলো পেছনের টেবিল থেকে সব শুনছিল প্রিয়া। তাই বিদায়ের আগে প্রিয়াকে বললাম, প্রিয়া এখন তাহলে আমি আসি। তারপর রাজ্যের তামাম দুঃখগুলোকে নিজের কাঁধে নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হলাম। যেই না এক পা সামনে বাড়ালাম অমনি প্রিয়া পেছন থেকে ডেকে আমাকে বলল, বুঝলি সুমন… সব যেহেতু জেনেই গেছিস তো আজ থেকে আমাকে আর প্রিয়া ডাকার কী দরকার? এখন থেকে আমি শুধুই তোর ভাবী!!
লেখক : সুমন আহমেদ
প্রথম প্রকাশ : দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১ মার্চ ২০১২